উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা পদে প্যানেলে নিয়োগের দাবীতে গাইবান্ধা মানববন্ধন

আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধাঃ
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে বৈষম্যের শিকার হয়ে গাইবান্ধা ও ঢাকাসহ দেশের ৩০ জেলায় ২৪ জুন রোজ বুধবার স্মারকলিপি, খোলাচিঠি প্রদান ও সকাল ১১ টায় গাইবান্ধা আসাদুজ্জামান মার্কেটের সামনে নিয়োগ বঞ্চিত প্রার্থীদের অংশ গ্রহনে একটি  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমগ্র বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের আক্রমনে দিশেহারা। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশসমূহের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত। এই বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব আমাদের এই সোনার বাংলায়ও পড়েছে। 

করোনার কারণে বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশের শিল্প, শিক্ষা, পরিবহন, পর্যটন, বৈদেশিক বাণিজ্য, চিকিৎসা ও আমদানী-রপ্তানী খাত। বিদেশ থেকে বহু কর্মজীবী মানুষের দেশে প্রত্যাবর্তন এবং চাকরি হারানোর ফলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে গিয়েছে। 

বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কৃষি পণ্যের রপ্তানি ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমানে জিডিপির ১৪ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের বৈদেশিক রপ্তানি বাণিজ্যেও কৃষিখাতের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মনে রাখতে হবে, করোনা পরবর্তী সময়ে কৃষিই হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। 

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, বিশ্ব করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বড় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এতে তিন কোটি মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। তাই সরকার ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাজেটে খাদ্য ও কৃষিতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ করেছে ১৫ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। 

এছাড়া করোনা-উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রণোদনা সুবিধার আওতায় ৪ শতাংশ সুদে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এ ঋণ জামানত ছাড়া কৃষি কাজে সরাসরি নিয়োজিত প্রকৃত কৃষক; ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষীসহ অন্যদের ফসল বন্ধকীকরণ চুক্তির মাধ্যমে প্রদান করা হবে। 

এছাড়া ফুল, ফল, মৎস্যচাষ ও পোল্ট্রিখাতে ৪ শতাংশ সুদে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা বিশেষ প্রণোদনা স্কিম গঠন করা হয়েছে। ফলে কৃষিখাতে মোট ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। করোনা- পরবর্তী কৃষি অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং নতুন সৃষ্ট দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি বাজার ব্যবস্থা, কৃষক ও ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বড় একটি সমস্যার সৃষ্টি হবে। আর এই ক্রান্তিকালে কৃষি কাজে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে কৃষকদের। 

আর এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন হবে কৃষি সেক্টরে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার উপযোগী দক্ষ জনবল। আর আমাদের দেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে বেশি মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। 


উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে দেশের কৃষি উন্নয়নে কোন বিকল্প চিন্তার অবকাশ নাই। কারণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকেন উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ। আর এই কৃষি সংক্রান্ত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ও কৃষি সংক্রান্ত ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ও করোনা পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য মাঠ পর্যায়ে বিশাল সংখ্যক উপ-  সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে সৈনিক প্রয়োজন। 


কারনদেশের সবচেয়ে বড় কৃষি সেবা প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি সেবা দেওয়ার কর্মী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদটি তার মোট পদ সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ শূন্য রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, 

এই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগে বর্তমানে ব্যাপক বৈষম্য, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি চলছে যা আমাদের জাতির পিতার স্বপ্নকে ভূলুন্ঠিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়। তাই আমরা আপনাদের অবগতির জন্য বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলাম।


আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এস.এ.এ.ও) পদে ২০১৮ সালে ১২.০১.০০০০.৩৮.১১.০০৪.২০১৭.৮২৬ নং স্মারক এর ১৬৫০ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ৫০ জেলার কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করার সুযোগ পেয়েছিল। 

পদটি ছিলো ১১তম গ্রেডের এবং সকল প্রকার কোটা ও সরকারি সকল বিধি-বিধান মানা হবে এই মর্মে উল্লেখ ছিল। গত ০২/০৮/২০১৯ ইং তারিখে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়, যেখানে ২৮০০০+ প্রার্থী অংশগ্রহন করে মোট ১০০৩৯ জন প্রার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। 

তারপর গত ১৩/০৯/২০১৯ ইং তারিখে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এতে মোট ৫১১৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। গত ১৮/১২/২০১৯ তারিখ থেকে গত ১৪/০১/২০২০ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৮ দিন ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ভাইভা পরীক্ষার ২ দিন পর গত ১৭/০১/২০২০ ইং তারিখ রোজঃ শুক্রবার বেলা ২ ঘটিকায় সরকারি ছুটির দিন প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১৬৫০টি রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়। 

এতে প্রাথমিক ভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে নিজের রোল না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা করেন কুড়িগ্রাম জেলার একজন মেধাবী প্রার্থী। এভাবে কতজন আত্মহত্যা করবেন উপরওয়ালা ভাল জানেন। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর (২০১৬-২০২০) পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে ফলাফল প্রকাশ করে তা অত্যান্ত হতাশা জনক। 

কারণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় যে, এই নিয়োগে কোনো অবস্থাতেই জেলা কোটা মানা হয়নি এবং তথাকথিত কিছু জেলা থেকে অধিক পরিমাণে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র মোতাবেক জেলা কোটায় ৩৩ জন নিয়োগ পাওয়ার কথা কিন্তু দেখা যায় প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত ১৬৫০ জন হতে বাছাই হন এতিম ও প্রতিবন্ধী বাদে জেলা কোটায় ৫২ জন। 

আর রংপুর জেলায় এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা কোটায় প্রায় ৩৪ জন নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২ জন জেলা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। আর আমাদের জেলাসমূহ থেকে প্রতিবন্ধী, এতিম, আনসার ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকে কিছু নিয়োগ দেওয়া হয়। 

কিন্তু জেলার সাধারণ মেধাবী নিয়োগ দেওয়া হয় নাই। তার মানে এই দাঁড়ায় যে আমাদের জেলা সমূহে সাধারণ মেধাবী নেই। ঐ বিশেষ জেলাসমূহে শুধু মেধাবীরা রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী জেলা হতে উত্তীর্ণদের মধ্যে মেধাক্রম অনুযায়ী নিতে হবে। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে পদ বঞ্চিত কিছু মেধাবীরা একত্রিত হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। উক্ত রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬/০২/২০২০ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বেশ কিছু রুল জারি করেন এবং নিয়োগ কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ আরোপ করেন। 

কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হাইকোর্টের রুল সমূহের জবাব না দিয়ে সুপ্রিমকোর্টে এ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২/০৩/২০২০ইং তারিখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ১নং বেঞ্চ তথা মহামান্য প্রধান বিচারপতিসহ মোট ৭ বিচারপতির সম্মানিত বেঞ্চ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রুলের দ্রুত জবাব দিতে ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।  তারপর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অদ্যবধি রুলের জবাব দেয়নি।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তথা মানবতার মা, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশ গড়ার সৈনিকরূপে দেশের সরকারের সাথে থেকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ হতে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ-২০১৮ এর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী সকল প্রার্থীকে প্যানেলে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। 

মাগো, আপনার একটি সুপারিশই পারে শত শত বেকারের বৃদ্ধ মা-বাবার মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে ও মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার অনুযায়ী বেকার থাকবেনা কেউ আর এর ধারাবাহিক সাফল্য। আর আমরা পাবো দেশ সেবার মহান সুযোগ। মায়ের কাছে সন্তানের দাবী আমাদের প্রতি যে ব্যাপক বৈষম্য, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির করা হয়েছে তার ন্যায় বিচার। 

যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতা মা আপনার শাসনামলে আর কেউ এ ধরণের বৈষম্য, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির করার সাহস না পায়। আমাদের সকল ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অধিকার আদায়ের একমাত্র পথ মিডিয়া/সংবাদমাধ্যম। 

আর এই ন্যায়সঙ্গত ও সত্য কথা আমাদের দেশনেত্রী মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হল মিডিয়া/সংবাদমাধ্যম। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে বৈষম্য, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি শিকার হয়ে ঢাকা সহ সারাদেশে এক যোগে ৩০ জেলায় আজকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

আজকে ২৪/০৬/২০২০ইং রোজ বুধবার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে স্মারকলিপি, খোলাচিঠি প্রদান জেলায় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

উক্ত জেলা সমূহ হলো- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, চাঁদপুর, জামালপুর, নোয়াখালী, ফরিদপুর, যশোর, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা। 

উক্ত সংবাদটি মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কামনা করছে নিয়োগ বঞ্চিতরা। বৈষম্যের শিকার ও পদ বঞ্চিত সকল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী গাইবান্ধা জেলা ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদ এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের পক্ষে । 

প্যানেলের মাধ্যমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ প্রদান করুন দেশের জনগণকে করোনার পরবর্তী দুর্ভিক্ষ হতে রক্ষা পেতে সহায়তা করুন এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে প্যানেল নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করেছে, 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপসকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগে চুড়ান্ত ফলাফলে বৈষম্য শিকার ও পদ বঞ্চিত সকল মেধাবী প্রার্থীরা আজ বুধবার দুপুরে শহরের আসাদুজ্জামান স্কুল এন্ড কলেজ মার্কেটের সামনে এ মানববন্ধন করে। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বঞ্চিত প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ,আবু রায়হান,রেজোয়ানুল,পাভেল সহ আরো অনেকে। 

এসময় বক্তরা নিয়োগ বঞ্চিত ৩৪৬৪ জনের প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানের দাবী জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ