দিনাজপুরে গবাদিপশুর মাঝে "লাম্পি স্কিন" রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে

চৌধুরী নুপুর নাহার তাজ স্টাফ রিপোর্টারঃ
দিনাজপুরে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন চাষীসহ খামারিয়া। ইতোমধ্যে এ রোগে প্রায় ৩ হাজার গবাদিপশু আক্রান্ত হয়েছে।

বেসরকারী হিসেবে মৃত্যু সংখ্যা শতাধিক হলেও সরকারী হিসেবে মাত্র ১২টি বাছুর মারা গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।  

জেলার ১৩টি উপজেলার ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২২টি ইউনিয়নকে আক্রান্ত প্রবণঅঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস।

এই জন্য একজন চিকিৎককে প্রধান করে তিন সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করে ২২টি টিমকে মাঠে পাঠানো হয়েছে। এই টিমের মাধ্যমে বিনা পয়সায় টিকা, ওষুধ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আক্রান্ত অঞ্চলে বিলি করা হচ্ছে সচেতনতামূলক লিফলেট। 

অপ-চিকিৎসারোধ ও বেশি দামে গবাদি পশুর ওষুধ বিক্রি বন্ধে গঠন করা হয়েছে মোবাইল কোর্ট। কুরবানির ঈদের আগে আকস্মিকভাবে এ রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ায় চাষীসহ খামারিয়া চরম আতঙ্কে পড়েছেন। 

এ মাসের প্রথমদিকে হঠাৎ করে গবাদি পশুর মধ্যে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দেয়। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, 

প্রথমে গরুর তীব্র মাত্রার জ্বর আসে। এরপর গরুর শরীর গোটা গোটা আকারে ফুলে যায়। গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি নামে। ফলে গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয়। 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন গবাদিপশু পালনকারীরা। গ্রামের পল্লী চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও ইনজেকশন দিলেও তেমন কোনও উপকার হচ্ছে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় ১৬ লাখ ৭১ হাজার ২শ’ ১৪টি গবাদিপশু রয়েছে। তিনি জানান, দিনাজপুর সদর ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে গরুর এই দুরারোগ্যব্যাধি ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। 

পালিত গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ। অনেকে না বুঝেই পল্লী চিকিৎসককে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এন্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, 

একমাত্র সচেতন থাকাই হলো এই রোগের প্রতিকার। জেলা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে প্রতিদিনই খামার মালিক ও কৃষকরা আক্রান্ত গরু নিয়ে আসছেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে মশা-মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা ও পরিচর্যা করলে কিছুটা হলেও এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।


দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম বলেন, সংক্রমকব্যাধি লাম্পি স্কিন রোগ রোধে গোয়াল ঘরের মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে। এ রোগটি ইতিপূর্বে ঝিনাইদহে দেখা দিয়েছিল, এখন দিনাজপুর জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। জেলায় যে কয়েকটি বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তা ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। 

পল্লী চিকিৎসকরা না বুঝে উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করায়, বাছুরগুলো মারা গেছে। এসব অপ-চিকিৎসারোধ করতে, ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করা হয়েছে। 

এছাড়াও গবাদি পশুর ওষুধে বেশি দাম নেয়া হলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেশি দামে ওষুধ বিক্রির অভিযোগে ১২ জুন দিনাজপুর শহরের স্টেশন রোডের ‘আদিত্য ফার্মেসী’ নামে একটি দোকানে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। 

তিনি জানান, এ পর্যন্ত জেলার প্রায় ৭২ হাজার গরুকে আমরা প্রতিষেধক ইনজেকশন দিয়েছি। তবে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। ১৭ জুন থেকে ২২টি মেডিকেল টিম গঠন করে জেলার ২২টি ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ