নারীর সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ধারণের মাধ্যম প্রতারণা, পুলিশী তৎপরতায় আটক প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য

মিজানুর রহমান মিলন স্টাফ রিপোর্টারঃ
সৈয়দপুরে সুন্দরী নারীকে দিয়ে অশ্লীল ভিডিও ধারণে বাধ্য করা এবং চাঁদা দাবির ঘটনায় জড়িত  প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার রাতে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সীপাড়া খেঁজুরবাগ মসজিদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের তিন সদস্য হচ্ছে,নীলফামারী জেলা সদরের বাবরীঝাঁড় চৌপথী বাজারের মিঠু হোসেনের ছেলে মো. লিমন হোসেন (২২), তাঁর স্ত্রী আকতারা বেগম (২১) এবং সৈয়দপুর শহরের আতিয়ার কলোনী এলাকার মৃত. অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিনের  ছেলে মো. আবু বিন আজাদ ওরফে শাওন (৩৫)। 

এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে আজ রোববার দুপুরে নীলফামারী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার আরজিতে বলা হয়, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলম বিদিতর ইউনিয়নের  পাইকান হাজীপাড়ার মৃত. জসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিম (৫০) ঘটনার দিন গতকাল শনিবার সকাল ১০ টার সময় ব্যক্তিগত কাজে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসেন। 

এ সময় প্রতারক চক্রের তিন সদস্য নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে তাঁকে আটক করে। তাঁকে বলা হয় তারা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছে যে তাঁর কাছে ইয়াবা রয়েছে। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি রিকশায় করে কৌশলে সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া খেজুরবাগ এলাকায় জনৈক আবু বিন আজাদ ওরফে শাওনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাসায় আগেই থেকে প্রতারক চক্রের  কয়েক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আব্দুর রহিমকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রতারক চক্রের সদস্যরা তাঁকে এলোপাতারি মারপিট করে। এরং তার পকেটে থাকা ৯হাজার ৮০০ টাকা কেড়ে নেয়। পরে তারা নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে (আব্দুল রহিম) পরণের কাপড়চোপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে। এরপর প্রতারকরা তাদের নারী সদস্য  আকতারা বেগমের সঙ্গে আব্দুর রহিমকে জড়িয়ে ধরে  মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। 

পরবর্তীতে ওই ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আব্দুল রহিমের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আর এ সময় প্রতারক চক্রের হাত থেকে বাঁচতে এবং মান সম্মানের ভয়ে আব্দুর রহিম তাদেরকে এক লাখ টাকা দিতে রাজী হয়। পরে প্রতারকদের হাতে আটক থাকা রহিম মুঠোফোনে তাঁর বাড়িতে যোগোযোগ করে তাঁর স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের ০১৭১৭-৬৩৫১৫৩ নম্বর মুঠোফোনের বিকাশ নম্বরে তিন দফায় ২০ হাজার টাকা দেন। আর বাকি অবশিষ্ট টাকা সংগ্রহ করে দেওয়ার শর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে  টাকা নিয়ে আসতে আব্দুল রহিম ছেড়ে দেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। সেখান থেকে ছাড়া পেয়েই আব্দুর রহিম সৈয়দপুর থানায় গিয়ে অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খানের কাছে তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা অবগত করেন। 

এসব ঘটনা জানার সাথে সাথে সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. সাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই আব্দুর রহিম বাদী হয়ে সাতজনকে আসামী করে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।গ্রেফতারকৃতরা ছাড়াও  মামলার অন্য আসামীরা হচ্ছে, রংপুর বাস টার্মিনালের শ্যামল রায় (৪০) ও তার স্ত্রী বীনা রাণী (৩৫), ঘাঘটপাড়ার নাজির (২২) এবং সেনপাড়ার আরমান (২৮)। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত বলেন, ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে দ্রুত পুলিশী তৎপরতায় প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এ ঘটনায় থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ মামলার এজাহারভূক্ত অন্য আসামীদেরও গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ