অসহায় মানুষের মাঝে তৃতীয় লিঙ্গের নদীর খাদ্য সামগ্রী বিতরণ!

মো: জালাল উদ্দিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.                              
দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো মানুষটির নাম দেওয়ান নদী সরকার, একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সমাজ যাদেরকে এখনও করে রেখেছে অচ্ছুত, সুসময়ে অন্যান্য মানুষেরা যাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা মেতে ওঠে। আজ সেই মানুষ নদী খাদ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছেন তাদের মাঝে।
সমাজে পুরুষের তুলনায় নারী অনেক বেশি নিগৃহীত। কিন্তু নারী-পুরুষের তুলনায় আরও বেশি নিগৃহীততৃতীয় লিঙ্গেরমানুষ, বাংলাদেশের সমাজে যারাহিজরাবলে পরিচিত। সরকার তাদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সমাজ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, মেনেও নেয়নি।
ফলে প্রতিনিয়তই এই শ্রেণীর মানুষকে সইতে হচ্ছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অন্যায়-অত্যাচার। সমাজে একছত্রভাবে হাসিঠাট্টার পাত্রও এরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব মোকাবিলায় গোটা দেশ যখন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে, ঠিক এমন সময় সেই সংগ্রামে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তার বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামে।  
(২৮ এপ্রিল) মঙ্গলবার সকালে একটি ভ্যানে ১০০ টি প্যাকেট নিয়ে মোল্লাবাজার গ্রামে নদী খাতুন চলে আসেন। আগেই তালিকা তৈরী করা ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন একটি করে প্যাকেট। মুখেও ধরে রাখছেন সামান্য হাসি, বলছেন, “ভাল থাকিস, নিরাপদে থাকিস
প্যাকেট পাওয়া কবির আলী দেখেন, ভেতরে কেজি চাল, ২৫০ গ্রাম ডাল, কেজি আলু আর ১টি সাবান। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় সীমাহীন খুশি হন তিনি। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকান নদীর দিকে, সমাজ যাদেরকে এখনও করে রেখেছে অচ্ছুত, আজ সেইঅচ্ছুতেরাইখাদ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছেন তাদের মাঝে।
খাদ্য সামগ্রী পাওয়া শুকজান, আলিয়া বিবিসহ কয়েকজন জানান, করোনাভাইরাসের কারণে তার দিনমজুর স্বামী গত বেশ কয়েকদিন হলো বাড়িতে বসে। ঘরে খাবার নেই বললেই চলে। না খেয়ে দিন পার করার মতো অবস্থা। ঠিক সেইসময় যেন ফেরেশতা হয়ে এলো নদী সরকার।
আল্লাহ, ওগের আরও তৌফিক দেক, ওরা যেন গরিবির উপকার করতি পারে, এযেন ঝরে পড়ে দোয়া, অন্তরের গভীর থেকে বেরিয়ে আসছে।
তৃতীয় লিঙ্গের নদীর গ্রামের বাসা কুমারখালী। তিনি বাউল শিল্পী হওয়ায় দেওয়ান নদী সরকার নামে এলাকা পরিচিত। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি তার কোমল হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। তাই সাধ্য অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বের হয়েছেন তিনি। খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিয়াঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হক, উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সমাজ সেবক শফিকুল ইসলাম শফিকে।
খাদ্যসামগ্রী পাওয়া দিনমজুর লিটন আলী সাহেল রানা বলেন, কাজ নেই, বাড়ি বসে আছি- সংসার চলে না। ঠিক সেইসময় দেওয়ান নদীর মতো কেউ এসে আমাদের খাবার দিয়ে যাবে, কখনোই তা ভাবিনি। আল্লাহ ওরে বাঁচায়ে রাখুক, সেই দোয়া করি।
দেওয়ান নদী সরকারের এই কর্মকান্ড অবাক করেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের। চেয়ারম্যান এলাকার প্রগতিশীল মানুষ তার এই কর্মকান্ডে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সমাজ সেবক শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, নদী খাবার বিতরণের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানালে আমি এখানে এসেছি। আজকে তার কথা আমি শুনেছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তার দেখাদেখি আরও অনেকে এভাবে উদ্বুব্ধ হবে বলে মনে করি।
দেওয়ান নদী সরকার বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি যে যার জায়গা থেকে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রধানমন্ত্রী যার যার অবস্থান থেকে অসহায়দের সাহায্যে এগিড়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। তার সেই আহবান এবং আমাদের প্রিয় নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের নির্দেশে অসহায়দের পাঁশে দাঁড়িয়েছেন। তার এই কর্মকান্ড  অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ