গুরুদাসপুরে কাঁচা বাঙ্গীতে কৃষকের ভাগ্যবদল

জালাল উদ্দিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি                                            
নাটোরের গুরুদাসপুরে রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গী চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই বাঙ্গী কেনাবেচা করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সাথী ফসল হিসাবে গুরুদাসপুরে বাঙ্গী তরমুজের আবাদ হয়ে থাকে। আর এই আবাদ করে শত শত কৃষকের ভাগ্যবদল হয়েছে। এসময় কৃষক-কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করেন। বিস্তৃর্ণ মাঠের মাঝ  দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু পিচ ঢালা সড়কের দুপাশে সারি সারি করে রাখা হয়েছে ফল আর ফল। রসুনের সামান্য ক্ষতি হলেও সাথী ফসল বাঙ্গীতে বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দামও পাচ্ছেন বেশ ভালো। এতে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের দেখা পাচ্ছেন এই এলাকার কৃষকরা। দূরের ফরিয়ারা (ছোট ব্যাপারী) আগেই আসেন এলাকার বাঙ্গী কিনতে। সকালে পাঁকা বাঙ্গী বিক্রির পর দুপুর থেকে শুরু হয় কাঁচা আধাপাঁকা বাঙ্গী ট্রাকে লোড। এগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। এভাবে প্রতিদিন গুরুদাসপুরের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে জমে উঠে কাঁচা-পাঁকা বাঙ্গী বেচাকেনা।
রসুনের জমিতে সাথী ফসল বাঙ্গী চাষ করে লাভবান হচ্ছে এই এলাকার কৃষকরা। বিগত বছর ধরে অনেকটা বিনা খরচে আবাদ লাভজনক হওয়ায় বাঙ্গী চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। উৎপাদিত এই বাঙ্গী স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বাঙ্গী চাষ করার জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয়না। রসুন চাষের জমিতেই বাঙ্গীর বীজ বপন করতে হয়। রসুন উঠে যাওয়ার পরই বাঙ্গীর গাছ ছড়িয়ে পড়ে ক্ষেতে। সেই সময়ে সামান্য সেচ, সার-কীটনাশক দিলেই গাছে গাছে ফুল ফল ধরতে শুরু করে। পহেলা বৈশাখ থেকে ধরে থাকা বাঙ্গী তুলতে শুরু করে কৃষক।
কৃষকরা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে রসুনে ভাল ফলন হলেও আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা। গুরুদাসপুরে প্রতিদিন ৩৫-৪০টি ট্রাক বাঙ্গী লোড হয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। প্রতিটি ট্রাকে তিন থেকে চার হাজার পিছ বাঙ্গী লোড করা হয়। এতে ট্রাক প্রতি প্রায় ১লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার বাঙ্গী নিয়ে যায় ব্যাপারীরা। গুরুদাসপুর থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার বাঙ্গী সরবারাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দূরের ব্যাপারীরা কৃষকের ক্ষেত থেকে প্রতি পিচ বাঙ্গী ৩০-৩৫ টাকা কিনে নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা বিক্রি করছেন ৫০-৭০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও প্রতিদিন রাস্তার মোড়ে পাঁকা বাঙ্গী নিয়ে কৃষক বধুরা ফরিয়াদের কাছে খুচরা ডালি চুক্তিতে বাঙ্গী বিক্রি করছেন।
গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুরে বছর ৪২০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গী ৫৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। চলনালী গ্রামের কৃষক সোহেল জানান, তিনি ৩বিঘা জমিতে বিনা হালে রসুন করেছিলেন। তিনি রসুনের দাম না আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গী চাষ শুরু করেন। গত বছর বাঙ্গী বিক্রি করে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবার লাভটা আরো বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। একই গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, রসুনের জমিতে বিকল্প ফসলের কথা ভাবতেই পারিনি। প্রতিবেশি একজন কৃষকের দেখা দেখি ১০বিঘা জমিতে বাঙ্গীর আবাদ শুরু করি। খরচ বাদেও প্রায় লক্ষ টাকা লাভ হয়েছিল। বছর সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছি। রসুনের ফলন ভালো না হলেও বাঙ্গীর ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ পিচ করে বাঙ্গী তুলে বিক্রি করতে পারছি। আশা করছি গতবারের চেয়েও এবার বেশি লাভ হবে।
শিধুলী গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম বলেন (৪০) বলেন, আমার বিঘা জমিতে বাঙ্গী হয়েছে। সার, কিটনাশক, সেচ সঠিক ভাবে পাওয়াতে সাথী ফসল বাঙ্গী উৎপাদনে তেমন বেগ পেতে হয়নি। রসুনের জমিতে সাথী ফল বাঙ্গী কৃষকের বাড়তি উপার্জনের আর্শীবাদ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গুরুদাসপুরের কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, গুরুদাসপুরে বিনা হালে রসুনের আবাদ হলেও অধিকাংশ কৃষক অসচেতনার কারনে সাথী ফসল চাষের প্রতি পূর্বে আগ্রহ ছিল না। গত বছরে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায়, কৃষক এখন সাথী ফল বাঙ্গীর আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। অনেকটা বিনা খরচে একই জমিতে বাঙ্গী চাষ অধিক লাভ জনক হওয়ায় গুরুদাসপুরের কৃষকদের  ভাগ্য বদল শুরু হয়েছে।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ