মহেশখালীর আনাড়ি রতনের মনগড়া সার্ভে রিপোর্টে ক্ষতি পূরণ থেকে বঞ্চিত প্রকৃতরা

এন আলম আজাদঃ
সরকারের উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিগ্রহণ কৃত জমির ক্ষতি পূরণ পেতে সেবা প্রার্থী জনগনের কাহিল পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। কক্সবাজারের "দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে সরকারের মেঘাপ্রকল্প বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইন ও এসটিএম স্হাপনা নির্মানের জায়গা জরিপের নামে এখন চলছে ভানুমতীর খেলা। কার স্বত্ত্ব কে পাচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। আর এসব কাজে ভূমিকায় রয়েছেন কথিত আনাড়ি সার্ভেয়ার ও দালাল সিন্ডিকেট। এদের খপ্পরে পড়ে মহেশখালীর শতশত মানুষ তাদের পৈত্রিক বসতবাড়ি জমি সহ সত্ত্বের প্রকৃত ক্ষতি পূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহেশখালী দ্বীপে রতন কুমার নামের এক বেসরকারি আনাড়ি সার্ভেয়ার অধিগ্রহণ অফিসের চিহ্নিত কিছু দূর্নীতিবাজ সার্ভেয়ারের নাম ভাঙ্গিয়ে জমির সার্ভে রিপোর্টে বিভিন্ন অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য। ইতিমধ্যেই কালামারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সেলিনা বেগম, ফরিদা বেগম, ছেনুয়ারা বেগম, সফি আলম, ছালে আহমেদ ও ধলঘাটার লেদু নামের ব্যক্তিদের জমি সার্ভে রিপোর্টে কুক্ষিগত করে মোটা অংকের বিনিময়ে অন্যের নামে দখল দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ অফিস থেকে ক্ষতিপূরণ ছাড়ার সহযোগিতা করেছে এই বেসরকারি আনাড়ি সার্ভেয়ার রতন কুমার।
সূত্র জানায়, স্বামীহারা সেলিনার যথেষ্ট ক্ষতি করেছে কালামারছড়ার তালেব আলী ও আবদু শুক্কুর। তারা সেলিনার স্বামী জাকারিয়ার ২০৪২ নং খতিয়ানের বি এস দাগ ১০০০ এর বিএস খতিয়ান নং ৫২৯, ৫৩০ ও ৫৩১ পুরো জমিই আত্মসাৎ করেছে রতন কুমারের দেয়া সার্ভে রিপোর্টের উপর। একইভাবে ঐ মৌজার ১৫৭ খতিয়ানের প্রাপ্ত সেলিনার স্বত্ত্বকে মিথ্যা সার্ভে রিপোর্টে অস্বীকার করা হয়েছে বলে জানায় সেলিনা নামের বিধবা।
ছেনু আরা নামের আরেক মহিলা জানান, অধিগ্রহণে পড়া তার জমির দাগ নং বি এস ৪০১১ যার বি এস খতিয়ান নং ৩৩২ মৌজা কালামারছড়া হোয়ানকের বি এস দাগ নং ৩৮৭৩, ৪৬৯৪, ৩৪২০, ৩৮১৩, ৩৮৪৬ সহ অসংখ্য মানুষের দাগের জমিও আনাড়ি সার্ভেয়ার রতন কুমারের সার্ভে রিপোর্টে অনিয়ম করা হয়েছ। বেসরকারী ঐ আনাড়ী সার্ভেয়ার রতন এর সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে এলএ অফিসে অধিগ্রহণকৃত কাজে তদবিরবাজ কিছু দালাল কালামারছড়ার মুহিবুল্লাহ, মামুন, জালাল উদ্দিন, জাকারিয়া, জসীম, ধলঘাটের বাদল, তাজউদ্দিন এবং মো হান্নানদের রয়েছে দহরমমহরম সম্পর্ক। তারাই সারাক্ষণ অধিগ্রহন অফিসে নিরীহ ও গরীব ভূমির মালিকদের সর্বস্বান্ত করছে বলে জানান অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়া ভুক্তভোগীরা।
এই আনাড়ি সার্ভেয়ার রতন কুমার এর দেওয়া মিথ্যা ও ভূয়া রিপোর্টের উপর নির্ভর করে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিগ্রহণ অফিসের অসাধু কিছু চিন্তিত সার্ভেয়ারদের কাছের মানুষ বনে গেছেন আনাড়ি সার্ভেয়ার রতন। তার রিপোর্টই এখন এসব সার্ভেয়াদের টার্গেট। লাখ লাখ টাকা ঘুষের নজরানা পেয়ে এলএ অফিসের অসাধু কিছু সার্ভেয়াররা রতন কুমারের মিথ্যা তামিল রিপোর্টকে হালাল করে। এছাড়াও কক্সবাজার এলএ শাখার কিছু সার্ভেয়ার সরেজমিনে অধিগ্রহণকৃত ভুমিতে পরিদর্শনে না গিয়েই এই আনাড়ী সার্ভেয়ার রতনের আনাড়ী রিপোর্টের উপর নির্ভর করে থাকে, পক্ষান্তরে পায় মোটা অংকের নজরানা। এই আনাড়ী রতন ইতিমধ্যে প্রত্যয়ন পত্রে কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ার আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদুল ইসলাম ও সদ্য বদলীকৃত মোঃ এমদাদ'দের নাম ম্যানশন করে মনগড়া সার্ভে রিপোর্ট তৈরী করে কক্সবাজার এলএ শাখায় জমা দেয়। অথচ বে-সরকারী কোন সার্ভেয়ার সরকারী সার্ভেয়ারের নিকট প্রত্যায়ন পত্রে নাম ম্যানশন করে দেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই এবং এটি সম্পূর্ণ বে-আইনি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার এলএ শাখার এক কর্মকর্তা। 
অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে, কালামারছড়ার সাত্তার সওদাগর নামের সেবা প্রার্থীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ নিয়েও তার দখলকৃত স্বত্ব জমি অন্যজনের ওয়ারীশি সম্পত্তি হিসাবে রির্পোর্ট দিয়েছে আনাড়ি সার্ভেয়ার রতন। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিদ্যুৎ চেকের মালিক হন স্বার্থান্বেষী কিছু মহল। আনাড়ি সার্ভেয়ার রতন নিজেকে একজন সংখ্যালুগু দাবি করলেও তার দ্বারা আরো বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে তারই সম্প্রদায়ের লোকজনরাই। এমন আলোচনা রয়েছে পুরো মহেশখালী জুড়ে। এমন কি অনেক সংখ্যালুঘু তাদের প্রকৃত ক্ষতি পূরণ পায়নি একমাত্র এই আনাড়ি সার্ভেয়ার রতনের কারণে।
এছাড়াও আরো অনুসন্ধানে জানা যায়, বি এন পি ও জামাতের কিছু চিন্তিত লোক এলাকা ছেড়ে বর্তমানে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল মোটেল জোনে রুম ভাড়া করে অফিস বানায়। ঐ অফিসে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সার্ভিয়ারেদের মন জয় করে সারাক্ষণ তাদের সাথে মিশে থেকে অভিনব কায়দায় এই সমস্ত কর্মকান্ড চালায় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তাদের এই এহেন কান্ডের জন্যই প্রকৃত ভুমির মালিকেরা এলএ অফিসের ধারে কাছে পর্যন্ত ঢুকতে পারেনা। কোন জমির মালিক এলএ অফিসে ঢুকলে তাদেরকে ঐ সমস্ত দালালদের মাধ্যমে আসার কথা বলে এলএ শাখার ঐ চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ সার্ভেয়ারগণ। সরকারের মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরতা আর জনদূর্ভোগের প্রধান অন্তরায় হলো এলএ শাখার কিছু দূর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার সহ দালাল সিন্ডিকেট। এমনই মনে করেন ভুক্তভোগী লোকজন। এদের কবল থেকে রক্ষা না পেলে ভূমির প্রকৃত মালিকেরাই ক্ষতিগ্রস্হ হবে বেশি।

এ ব্যাপারে বেসরকারী সার্ভেয়ার রতনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার জানা মতে মহেশখালী উপজেলায় সরকারী প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির কোন প্রকৃত মালিককে সার্ভে রিপোর্টে বঞ্চিত করা হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ