কক্সবাজারে ঝিনুক শিল্পেও একটি সম্ভাবনাময় খাত

আব্দুল আলীম নোবেলঃ
কক্সবাজার থেকে: শঙ্খ বা ঝিনুকের আলাদা একটা মুগ্ধতা ছড়ানো রঙ আছে। আর তা যদি হয় সমুদ্রের ঝিনুক, তবে তো কথাই নেই। রঙের সঙ্গে তখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় আকৃতি আর সমুদ্রের শব্দ। 
কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্ট ও হলিডের মোড়ে ঝিনুক মার্কেট রয়েছে।  এইটি পর্যটকদের কাছে আলেদা কদর রয়েছে।  এই শহরে প্রায় হাজার খানেক মানুষ জড়িত রয়েছে এই ঝিনুক শিল্প নিয়ে। এতে অনেক পরিবারের জীবন চলে এ পেশায়। সঠিক প্রশিক্ষণ ও সরকারের তরফ থেকে সুযোগ সুবিধা পেলে আরো হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। 

 সমুদ্র থেকে আহরণ করা ঝিনুক বা শঙ্খ যখন মন রাঙানোর জন্য আমাদের হাতে এসে পড়ে, তখন সেই ঝিনুক তার রঙ মাধুর্য দিয়ে ছুঁয়ে দেয় আমাদের মন। আর তাতে যদি উঠে আসে প্রিয় মানুষটির নাম বা কোনো স্মৃতিকথা, তবে তা হয়ে ওঠে সত্যিই অনন্য।

বুধবার রাতে (১৫ অক্টোবর ) কক্সবাজারে সৈকত তটে সুগন্ধাস্থ ঝিনুক মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেল এমন দৃশ্যই। এখানে আগত দর্শনার্থীরা ফেরার সময় প্রিয় মানুষটির জন্য কিনে নিয়ে যান শামুক-ঝিনুক বা তার নানা শিল্পকর্ম।

ঠিক তেমনি একটি শিল্প হলো শামুক বা ঝিনুকের উপর নিজের ইচ্ছেমতো শব্দ খোদাই করে নেওয়া। বিভিন্ন রঙের শামুকের মধ্য থেকে একটি পছন্দ করে আর নিজের নাম বা প্রিয় শব্দটি লিখে অর্ডার দিলেই খোদাই করে সে নাম লিখে দেওয়া হবে শামুকের গায়ে। যা পাওয়া যাবে ঝিনুক মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকানে।

এছাড়া আরও আছে শামুক-ঝিনুকের তৈরি মেয়েদের বিভিন্ন অলঙ্কার, ঘর সাজানোর দ্রব্যাদি, চাবির রিংসহ আরও অনেক কিছু। পাওয়া যাবে শুধু ঝিনুক আর প্রবালও। শুধু পছন্দ করে কিনে নিলেই হলো। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই হাতে চলে আসবে ঝিনুকে খোদাই করা পছন্দের শব্দটি।

শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার বা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অসংখ্য ধরনের এসব শামুক-ঝিনুক কিনে নেওয়ার পর মেশিনে একটু পরশ বুলিয়েই দোকানিরা দিয়ে দেন মনের মতো আকৃতি। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি নামেও বেশ মনোরম এই পণ্যগুলো। এগুলোর মধ্যে পঞ্চমুখী, শৈবাল, প্রবাল উল্লেখযোগ্য।

ঝিনুক মার্কেটে কথা হয় বিভিন্ন ধরনের ঝিনুক আর প্রবাল কেনা একজন পর্যটক সোনিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রায় ২ হাজার টাকার ঝিনুক কিনেছেন কক্সবাজার থেকে বাসায় ফিরে প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার জন্য। তার মাঝে আছে খোদাই করা শামুকও।

কথা হলে সোনিয়া  বলেন, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের স্মরণ করেই এইসব কেনা। কক্সবাজার তো সমুদ্রের, তাই এখানে এগুলোই প্রসিদ্ধ। সেখান থেকেই অন্য সব আর আমার জন্য এটা একটা বড় স্মৃতি।

ঝিনুক মার্কেটের বিক্রেতা কলাতলীর ইব্রাহিমের জানান, প্রতিদিন তিনি প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার সামগ্রী বিক্রি করেন। পর্যটন মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ জাহার টাকা বিক্রি হয়। 
আর পর্যটকেরা সমুদ্র ভ্রমণের স্মৃতি করে রাখার জন্য বেশ যত্ন আর ভালোবাসা নিয়েই হাতে তুলে নেন সমুদ্রের দীর্ঘদিনের এই সঙ্গীকে।
প্রাণি ঝিনুক নির্ভর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুদীর্ঘকাল থেকে প্রতিষ্ঠিত।

 যদিও বাংলাদেশের ৬৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলরাশিতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায় তবু এদেশে এটি খুব বেশি প্রসারিত হয়নি; যেমনটি হয়েছে,  পার্শ্ববর্তী ভারত, চীন ও জাপানে - এরা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঝিনুক নিয়ে কাজ করে তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ