কক্সবাজারে ৩৪ জনপ্রতিনিধি পদ হারাতে যাচ্ছে!

আব্দুল আলীম নোবেলঃ
মরণ নেশা ইয়াবার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ১ চেয়ারম্যান ও ৫ কাউন্সিলর সহ ৩৪ জনপ্রতিনিধি পদ হারাতে পারে। এই জনপ্রতিনিধিরা ইয়াবা ব্যবসায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মসমর্পণ সহ কারাগারে ও পলাতক রয়েছে। এতে স্থানীয় সুবিধাভোগী সাধারণ জনগণ নিয়মিত নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সামাজিক সংগঠন "পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন" কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে ইয়াবা অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের পদ বাতিল চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে।

এইসব জনপ্রতিনিধিরা হচ্ছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম ইয়াবা মামলায়, ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু, শামসুল আলম, ময়াজ্জেম হোসেন দানু আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রয়েছে। এছাড়া ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমানও ইয়াবা মামলায় আত্মগোপনে রয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল্লাহ প্রঃ ইয়াবা ডন দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাহিরে আত্মগোপনে রয়েছে। ইউপি সদস্য এনামুল হক এনাম ও ওমর হাকিম ইয়াবা মামলায় কারাগারে রয়েছে। সম্প্রতি ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বন্ধুক যুদ্ধে মারা পড়েছে। এছাড়াও গত ২ মাস ধরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজান মিয়া ইয়াবার অভিযোগে আত্মগোপনে রয়েছে।

 বহু বিতর্কিত সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির আপন সহোদর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের হিট লিস্টে থাকা টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মৌলভী মুজিবুর রহমান ও মনিরুজ্জাম মনির পলাতক এবং কাউন্সিলর নওশাদ ইয়াবার অভিযোগে আত্মসমর্পন করে কারাগারে রয়েছে। ইয়াবা সহ আটক হয়ে কারাগারে আছে কাউন্সিলর শাহ আলম প্রঃ ইয়াবা ডন সহ কাউন্সিলর রেজাউল করিম মানিক।৫
 হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাজাপ্রাপ্ত আসামী সামশুল আলম বাবুল আপিলে বের হয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন ইয়াবাসহ আটক হয়ে গেল ঈদের পর থেকে কারাগারে রয়েছে। ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ও নুরুল হুদা আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রয়েছে। এছাড়া ইউপি সদস্য টেকনাফ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।

 হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহ আলম ইয়াবাসহ আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে। ওই পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রাকিব আহাম্মদ বিদেশে পলাতক ও ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তাফা চৌধুরী লালু সহ গফফার মেম্বার আত্মগোপনে রয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু বক্কর ও আব্দুর রউফ অস্ত্র ও ইয়াবা মামলায় কারাগারে রয়েছে।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোস্তাক আহমদ প্রঃ ইয়াবা ডন ইয়াবা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পলাতক রয়েছে। সম্প্রতি আদালতের আদেশে তার বাড়ী-ঘর ক্রোক করা হয়।

একাধিক মামলা নিয়ে মাসের পর মাস বছরের পর বছর কারাগারে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বখতিয়ার আহাম্মদ প্রঃ ইয়াবা ডন। সম্প্রতি বিজ্ঞ আদলত তাকে ইয়াবা মামলায় ১৪ বছর সাজা দেন। এছাড়াও আত্মগোপনে রয়েছে একই পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদীন, নুরুল আমিন, কামাল উদ্দিন, তোফায়েল আহম্মদ, নুরুল হক ও সুলতান আহাম্মদ।

এদিকে গত শুক্রবার কক্সবাজার সার্কিট হাউজে এক বৈঠকে মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম এর উপস্থিতিতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান পলাতক ও কারাগারে থাকা এবং নিহত জনপ্রতিনিধিদের আসন গুলো শুন্য ঘোষণা করার কার্যক্রম দ্রুত করার তাগিদ দেন। এর পরিপ্রেক্ষীতে খবর পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, টেকনাফ, উখিয়া ও রামু উপজেলার স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের উপস্থিতি বই সমূহ নিয়ে নেন। জনপ্রিতিনিধিদের উপস্থিতি স্বাক্ষর দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান, কোন জনপ্রতিনিধি মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিধি লঙ্গণ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মুখোস উন্মোচিত হবে শীঘ্রই।

পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলনের সমন্বক (আইন) ব্যারিস্টার ফারজানা রশিদ জানান, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ ধারার ৪ এর (ক)/(খ) উপ-ধারা অনুযায়ী কোন জনপ্রতিনিধি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে পরিষদের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকিলে এবং পরিষদ বা রাষ্ট্রের স্বার্থের হানিকর কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকিলে অথবা দুর্নীতি বা অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়া থাকিলে উক্ত জনপ্রতিনিধি তাহার স্বীয় পদ হইতে অপসারণযোগ্য হইবে। বছরের পর বছর এইসব ইয়াবা কেলেংকারীতে জড়িত জনপ্রতিনিধিরা পলাতক ও কারাগারে থাকার কারণে সাধারণ মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ