বেশকয়েকজন থানা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা'র সিন্ডিকেটে জিম্মি পুরো জেলা। সাক্ষী গোপালের ভূমিকায় উপর মহল!
মো: মনছুর আলম (এম আলম): গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলায় দায়িত্ব পালনকারী আনসার ভিডিপির বেতন-ভাতা নিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়। জেলার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে তালিকা মোতাবেক পিসি, এপিসি, আনসার ও ভিডিপি সদস্য মিলে প্রায় ২৫ হাজার জন মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী ডিউটি করেন। সিসি তালিকায় শুধুমাত্র ৭ হাজার জনের মত আনসার ভিডিপি সদস্যের তথ্য সঠিক থাকলেও বাকি সবার রয়েছে বিভিন্ন গড়মিল।
সরকারি নিয়মানুযায়ী জনপ্রতি ৬০০০ থেকে ৬৩০০ টাকা করে ভেতন ভাতা ও বিভিন্ন আনুসাঙ্গিক খরচ সহ সর্বমোট প্রায় ১৫ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ আসে। এই বরাদ্দ থেকে বেতন-ভাতা হিসাবে জনপ্রতি দেড় থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত পেলেও আনুসাঙ্গিক খরচের টাকা মোটেও পায়নি কেউ। বাকি ১০ কোটি টাকা মত আনসার ভিডিপি'র প্রতিটি ইউনিয়ন দলনেতা ও নেত্রী থেকে শুরু করে ধাপেধাপে ইউনিয়ন কমান্ডার ও থানা কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট যোগে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে পকেটে ভরেন। আর এসব দুর্নীতির নেপথ্যে থেকে নির্দিষ্ট একটা ভাগ পকেটে ভরে চুপ থাকেন জেলা কমান্ড্যান্ট এ এইচ এম সাইফুল্লাহ হাবিব। এ বিষয়ে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনও জনশ্রুতি রয়েছে, এ দুর্নীতির টাকার নির্দ্দিষ্ট কিছু অংশ তার উপরেও স্তরভেদে জায়গায় পৌঁছে যায়। নচেৎ গেল নির্বাচনের বেতন-ভাতা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টির পরও যেন উপর মহল সাক্ষী গোপালের ভূমিকায় থাকার কথা নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচনের পূর্ববর্তী আনসার ভিডিপি'র সদস্যদের ডিউটির তালিকা করার মুহুর্তে অনেকের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে আবার অনেককে বেতন-ভাতা প্রদানের সময় টাকা কেটে রাখার শর্তে নাম তোলা হয়। তবে ঐ তালিকায় আনসার ভিডিপি'র সদস্যদের নিজনিজ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নাম্বার দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলেও তা পালন করা হয়নি। এমনকি নির্বাচনের সময় তালিকানুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্ব থাকা পিসি, এপিসি, আনসার ও ভিডিপি'র অনেক সদস্য ঘরে বসে থেকে চুক্তিভিত্তিক সাধারণ মানুষকে মাত্র কয়েকশ টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব পালন করান। এসব দুর্নীতির কলকাঠি নেড়ে সিন্ডিকেটযোগে পুরো চট্টজেলা জিম্মি করে রেখেছেন আনসার ভিডিপি'র বেশকয়েকজন থানা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
এই সিন্ডিকেটে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন বোয়ালখালী থানা কোম্পানি কমান্ডার এরশাদ উল্লাহ, সীতাকুণ্ড থানা কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম, চন্দনাইশ থানা কর্মকর্তা মোঃ শাহ জালাল সোহেল, পতেঙ্গা থানা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, বায়েজিদ থানা কর্মকর্তা রাফি উদ্দিন, সাতকানিয়া থানা কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার, পটিয়া থানা কর্মকর্তা মোস্তফা জাহান রাইয়ান জিহান, সন্দ্বীপ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টিআই স্বপন কুমার পাল, লোহাগাড়া থানা কর্মকর্তা ফৈজুন্নেছা বেগম, হাটহাজারী থানা কর্মকর্তা তাপস দত্ত, ফটিকছড়ি থানা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আজিজ, রাউজান থানা কর্মকর্তা ফাহমিদা ইয়াছমিন, ডাবল মুড়িং থানা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন, পাহাড়তলী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টিআই মেজবাহ উদ্দিন, পাঁচলাইশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টিআই মোবারক হোসেন ও বন্দর থানা কর্মকর্তা নিরঞ্জন রাজবংশি সহ আরো কয়েকজন। এছাড়াও আনসার ভিডিপি চট্টগ্রাম জেলা কমান্ড্যান্ট, থানা কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষক, ইউনিয়ন কমান্ডার, দলনেতা ও দলনেত্রীদের দূর্নীতি/ঘুষ লেনদেন উৎকোচ গ্রহণ মাসোহারা উত্তোলন সহ বিভিন্ন অনিয়মের সরেজমিন তদন্ত মতামত ও প্রমাণিত বিষয়াদির উপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন চলবে।
0 মন্তব্যসমূহ