পুলিশের অনিয়ম তুলে ধরায় সাংবাদিক মনছুরের বিরুদ্ধে সাইবার মামলা, বিএমএসএস এর নিন্দা

গাজী গোফরান, মহানগর প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম): গত ১১ জুলাই (মঙ্গলবার) দৈনিক 'জাতীয় অর্থনীতি'র শেষ পাতায় প্রকাশিত "বাঁশখালীতে এসআই শহীদের যত অপকর্ম, অভয়দাতা ওসি কামাল" শিরোনাম এবং "মহিলা পুলিশ ব্যতীত দিনদুপুরে নারীকে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে উঠালেন ২ পুরুষ" উপ শিরোনামের সংবাদের ভিকটিমের মা জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে সাংবাদিক মনছুর সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সাইবার মামলা দায়ের করেন। যাহা, সাইবার পিটিশন মামলা নং- ৩৮৯, তাং- ১১/০৭/২৩ইং বলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জুলফিকার হোসেন নিশ্চিত করেন। সাংবাদিক মোঃ মনছুর আলম জাতীয় অর্থনীতি এবং বাঁশখালী নিউজে দায়িত্বে আছেন। এঘটনায় নিন্দা সহ অবিলম্বে সাইবার মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমান।

প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে, সাইবার মামলার বাদী জেসমিন আক্তারের মেয়ে ভিকটিম সুমাইয়া ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে রাশেদকে বিয়ে করে। বাদী জেসমিন আক্তার চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের গুনাগরি এলাকার ১নং ওয়ার্ডের মতলব বাড়ী প্রবাসী ইউনুসের স্ত্রী। তার মেয়ের বিয়ের পর থেকে রাশেদের ঘরে সংসার করা অবস্থায় এসআই শহীদ আরো পুলিশ নিয়ে ৬ মে সকালে জেসমিন আক্তারের সাথে বাহারছড়া গিয়ে সুমাইয়াকে তোলে আনে। সেই মুহুর্তের ধারণ করা ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে এসআই শহীদের প্রকাশ্য অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বেশ কয়েকটি অনলাইনে সূত্রমূলে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। যে ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই শহীদের নেতৃত্বে কোন মহিলা পুলিশ ছাড়াই ২ পুরুষ দ্বারা দিনদুপুরে এক নারীকে টেনে হেঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে পুলিশবাহী সিএনজি গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। একই সাথে ঐ নারীকে গালমন্দ করতে করতে সিএনজি গাড়ীর কাছে যায় এসআই শহীদ ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। এসময় পুলিশের পেছন পেছন ও আশপাশে এলাকার শতশত নারী পুরুষের ঢল নেমে আসে। এছাড়াও জেসমিন আক্তারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এসআই শহীদ তার দায়িত্বরত এলাকা পেরিয়ে পুলিশ আইনকে উপেক্ষা করেও ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দৃশ্যের মত এমন অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করেননি বলে প্রকাশ হয়।

অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জেসমিনের সাথে পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় থানায় কিংবা ফাঁড়িতেও আসাযাওয়া করেন তিনি। সেই সূত্রে তার সাথে পুলিশের এসআই শহীদের গভীর সম্পর্ক সহ তিনি একজন পুলিশের সোর্স হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে এলাকায়। এমনকি এই এসআই শহীদ যেকোন কাজে জেসমিনকে সহযোগিতা করেন। এমনকি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জেসমিনের সাথে এসআই শহীদ কোর্টে গিয়েও সহযোগিতা করেন বলে তথ্য রয়েছে।

বাদীনি জেসমিন আক্তার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দীর্ঘদিন মামলার সূত্র ধরে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল ও এসআই শহীদের সাথে তার সবসময় যোগাযোগ হয়। খবরটা প্রকাশ হওয়ার পর ওসি কামাল তাকে ফোন করে জানান। মামলাটি হওয়ার পর তদন্তকারী অফিসার তাকে ফোন করে বিবাদীর মোবাইল নাম্বার চাওয়ায় তিনি রামদাস ফাঁড়ির এসআই শহীদকে জানালে, নাম্বার না দেওয়ার জন্য নিষেধ করেন। এছাড়াও গত রমজানে ১৬ এপ্রিল রাতে সাংবাদিক মনছুরের নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে পুলিশ বলে এত মারধরের পরও তার শিক্ষা হচ্ছে না।

মামলার আরেক বিবাদী আসিফ ইকবাল জানান, গত ১০ জুন আমার আইডি হ্যাক হয়েছিল, হ্যাক হওয়ার বিষয়ে আমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। পরে ৮ জুলাই আইডি ফিরে পাই। তারমধ্যে আমার আইডির নামে, "গায়ে আছে পুলিশের পোষাক, কাজের বেলায় নেই" মর্মে একটা কমেন্ট এর স্ক্রিনশট দেখিয়ে এই সাইবার মামলায় আসামী করা হয়।

সাংবাদিক মোঃ মনছুর আলম বলেন, জাতীয় দৈনিক অর্থনীতিতে প্রকাশ হওয়া সংবাদটিতে ভিকটিম সুমাইয়াকে প্রকাশ্যে শতশত লোকের সম্মুখে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানী ও এসআই শহীদের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হলেও ভিকটিমের মা জেসমিন আক্তার উলটো আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। শুধু তাই নয়, মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন মামলার বিষয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। এবং আমাকে অবগত না করে গোপনে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করিয়ে গ্রেপ্তারি ফরোয়ানা জারীর চেষ্টাও করেছিল এসআই শহীদ। পরে আমি খবর পেয়ে নিজেই তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে মামলার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।

সাংবাদিক মোঃ মনছুর আলম আরো বলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন রামদাস মুন্সিহাট ফাঁড়ির এসআই শহীদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অভিযোগ ও নিউজের বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসতেছে। এর জেরে গত ২৭ মার্চ আমাকে মিথ্যা মাদক মামলা দেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় "সাংবাদিককে নিয়ে এসআইয়ের ‘তুঘলকি কাণ্ড’" শিরোনামে একুশে পত্রিকা সহ বেশকিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বাঁশখালী থানা পুলিশ আমার উপর চড়াও হয়। পরে গত রমজানে ১৬ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে বাঁশখালীর গুনাগরি স্টেশন থেকে আমার নিজ বাড়ী খানখানাবাদ যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা আমার উপর হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্য মাদক মামলার নাটক সাজায়। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বশরীরে হেডকোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। একই সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে অনুলিপি জমা দেই। এদিকে মাদক সেবনের ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করে পুলিশকে মিথ্যা মাদক মামলা রুজুতে সহায়তা করায় বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম বরাবর স্বশরীরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। আর এই ঘটনায় করা আমাকে নির্যাতনের কিছু ফুটেজ বাদী জেসমিন আক্তারকে দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাইবার মামলাটি করার সাহস যোগায় এসআই শহীদগং। অন্যথা পুলিশ-সাংবাদিক ইস্যু একজন সাধারণ মানুষ তার নিজের ঘাড়ে টেনে নিয়ে দায় নেওয়ার চেষ্টা করার কথা না। কারো প্ররোচনায় বশীভূত না হয়ে আমার বিরুদ্ধে করা সাইবার মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ