কক্সবাজারে গলাকাটা বাণিজ্য দায়সারা পর্যটন সেবা

আব্দুল আলীম নোবেল: ঈদুল আযহা ছুটি সামনে রেখে কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল, পর্যটকদের এই বাড়তি চাপ বাড়ায় কলাতলীর ছোট-বড় আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজের  রুম আশ্চর্যজনকভাবে অগ্রিম বুকিং হয়েছিল তবে এমন সুযোগেকে কাজে লাগিয়ে অনেক ব্যবসায়ী গলাকাটা বাণিজ্য করেছে।

টানা ৩দিন ছুটিতে কক্সবাজারে হোটেল পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে প্রতিটি হোটেলের ভাড়া (নরমাল) সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। কিছু ভাড়া ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। তাই ঈদুল আযহার ছুটিতে পর্যটকদের থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় ও পর্যটক হয়রানি অভিযোগ তুলছেন অনেক পর্যটক।

সরেজমিনে গত কয়েকদিন হোটেল-মোটেল জোনে ঘুরে এ নৈরাজ্যকর অবস্থা দেখা গিয়েছে। এদিকে এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের জন্য কক্সবাজার শহরে থাকার মতো পর্যাপ্ত আবাসিক হোটেল নেই। ফলে বেশ কয়েক বছরের মতো এবারও রাস্তায়-রাস্তা­য় পর্যটকদের রাত যাপনেরমতো দৃশ্য দেখা মেলিনি। এর পরেও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি পর্যটক আগমন যেন কক্সবাজারবাসীর জন্য ‘অভিশাপ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পর্যটকদের আগমনের আগেই প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারেও। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের চাপের কারণে পর্যটন শহরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দেশের অন্য জেলা শহরের তুলনায় বেশি। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটায় তা আরো বেড়ে যাচ্ছে। মাংস, মাছ থেকে শুরু করে শাক-সবজির মূল্য পর্যন্ত এখন সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

কলাতলীর পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবছর শীত ও সরকারি ছুটিসহ নানা ছুটিতে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের ভিড় হয় কক্সবাজারে। তবে অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারটিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ব্যবসায়ীদের দাবি বেড়াতে আসলে কিছু টাকা খরচ হতেই পারে। এটা দোষের কিছু না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেলে নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট রাখার নিয়ম থাকলেও কোন হোটেলেই তা দেখা যায়নি। বেশ কয়েকটি হোটেলে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ হোটেলে তাদের কোন রুমই খালি নেই। আর এসব হোটেলে প্রতিটি রুম (নরমাল) সাড়ে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকায় ভাড়া হয়েছে।

কলাতলীতে রুম বুকিং দেওয়া কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, কোন রুমই পাওয়া যাচ্ছে না। যে কয়েকটি পাওয়া যাচ্ছে তার দাম ৭ হাজার চাওয়া হচ্ছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, পর্যটন মৌসুমে হোটেল-মোটেল অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রকাশ্যে চলছে। বিশেষ করে কলাতলী কেন্দ্রিক দালালদের দখলে আবাসিক হোটেলের রুম চলে গেছে। ইতোমধ্যে এই দালালচক্র নিজেদের লোক আসার কথা বলে হোটেলের রুম বুকিং দেয়। চড়া দামে পর্যটকদের কাছে রুম ভাড়া দিতেই দালালচক্র এই কৌশল নেয়। ফলে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষে নতুন করে রুম বুকিং নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যেসব হোটেল সাধারণত ৬শ থেকে ৮শ টাকা রুম ভাড়া নেওয়া হয়, সে সব তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বলেও পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ রুম হোটেল মালিকরা ধরে রেখেছে। আর কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীর হতে চলে গেছে। তবে এ জন্য তারা প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, কলাতলীর গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারি রেস্ট হাউসে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। কেউ গলাকাটা বাণিজ্য করলে বিষয় টি দুঃখজনক।

কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেলের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের হোটেলগুলোতে নির্ধারিত মূল্যেই ভাড়া দেওয়া হয়। তিনি রুম ভাড়ার মূল্য তালিকা প্রসঙ্গ টেনে আরও বলেন, পর্যটন শহরে কোন হোটেল মোটেল গেস্ট হাউসে রুম ভাড়ার মূল্য তালিকা টাঙ্গানো হয় না।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট সভাপতির পক্ষে পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা এডিএম আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরায় মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। এসব তদারকিতে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সেবা মানের সাথে সেবার দাম নির্ধারণ করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ