কক্সবাজারের মাদক ব্যবসার হাল-হকিকত (পর্ব- ১) মাদক সম্রাজ্ঞী লাকি এখনো অধরা


এম আলমঃ দেশের সর্বদক্ষিণে যে জেলাটি রয়েছে তা হল কক্সবাজার। এ জনপদটি পূর্ব থেকে বিভিন্ন কারণে অকারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে। যেখানে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম সমূদ্র সৈকত সহ নানা দর্শনীয় স্থান। এটি পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও সি,আই,পি ভিআইপি সহ সরকারের উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তার জন্মভূমি এ জেলা।

তবে অভিযোগ রয়েছে- মাদকে ভাসছে গোটা কক্সবাজার। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে ষ্টেশন গুলোতেও চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অলি-গলিতে দেখা মেলে মাদকসেবীদের। প্রায়ই তাদের দেখা যায় উশৃঙ্খল মাতলামিপনায়। মাদক সেবন করে মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ভুরিভুরি।

জানা গেছে, জেলার উপজেলা, গ্রাম ও শহর মিলিয়ে প্রায় বেশকটি পয়েন্টে গাঁজা, ইয়াবা ও চোলাই মদ বিক্রি হয় নিত্যদিন। এ জেলা বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় ও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন কায়দায় হারহামেশা ঢুকছে এসব মাদক। বর্তমানে মাদকসেবীর মধ্যে স্কুল কলেজ পড়ুয়া উঠতি বয়সের তরুণদের সংখ্যা অত্যধিক।মাদকসেবীরা মাদকের অর্থ জোগাড় করতে প্রায়ই চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এ জেলায় মাদক ব্যবসায় তৎপর রয়েছে প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের বাইরেও ব্যক্তি কেন্দ্রীক এ ব্যবসার রমরমা দিন যাচ্ছে এখন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুটিকয়েক দুষ্টচক্র সিন্ডিকেট ও ব্যক্তি বিশেষের এ মাদক ব্যবসাকে নানা ভাবে উৎসাহ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের আস্কারা পেয়েই মাদক সিন্ডিকেট এখন আরো বেপরোয়া। দিন দিন এ ব্যবসায় নতুন মুখের আগমন ঘটছে। মার্কা মারা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরাই তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করার পরিকল্পনায় নতুন মুখের কাছ থেকে অডেল টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসাকে বাড় বাড়ন্ত করছে।

এ কৌশলে সবচেয়ে বেশী এগিয়েছে জেলার টেকপাড়াস্থ চৌমুহনীর মাদক ব্যাপারী শাহানাজ পারভীন লাকী। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, লাকি দীর্ঘ যুগ ধরে কক্সবাজার শহরের মাদক ব্যবসা শাসন করছে। মাদকের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী লাকী প্রশাসনের একাধিক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক দফা কারাবরণ করলেও এ ব্যবসা ছাড়াতে পারেনি। রহস্যজনক কারনে তার মাদক ব্যবসায় এ পর্যন্ত আইনি সংস্থার বড় কোন অভিযান হয়নি। মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অভিযানের নামে অল্প পরিমানে মাদক/ইয়াবা রিকভারি দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

সুত্রে আরো জানা যায়, মাদক সম্রাজ্ঞী লাকী তার মাদক ব্যবসার নিরাপত্তা রক্ষায় ঘাটে ঘাটে বিশ্বস্থ সোর্স থেকে শুরু করে আইনি সংস্থার সদস্যদেরও ব্যবহার করে। তারা অভিযান কিংবা অন্য কোন ঝামেলার আগাম খবর দিয়ে মাদক সম্রাজ্ঞী লাকিকে অবগত করায় সতর্ক বার্তা পেয়ে তিনি মাদকের ডেরা থেকে নিরাপদে সরে পড়ে বার বার।

স্থানীয়রা জানান, এই ডেরায় শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মাদক সেবীদের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যা হলেই ঐ ডেরায় ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এলাকার লোকজন একাধিকবার আইনি প্রশাসন ও স্থানীয় ভাবে লাকীর এই মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারনে এর কোন সুরহা হয়নি। তাদের নীরবতায় মাদক সম্রাজ্ঞী দিনের পর দিন তার অবৈধ মাদক ব্যবসায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে। স্থানীয় সচেতন মহলের কেউ তার এ মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে মৃত্যুর হুমকি সহ মিথ্যা মামলার ভয়।

জানা যায়, সম্রাজ্ঞী লাকি মাদক ব্যবসার পাশাপাশি কিছু সংখ্যক সন্ত্রসীও লালন-পালন করে। তারা মাদক ব্যবসার প্রতিবাদকারীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে মৃত্যুর বার্তা পৌঁছায় বলে জানা যায়।অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক সম্রাজ্ঞী লাকি’র বিরুদ্ধে কয়েকটি মাদকের মামলা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি লাকীর সাথে অপর এক কারবারির ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কথোপকথনের একটা অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। মুলত: এই অডিও বার্তায় তার এই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সত্যতা ফুটে উঠে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শাহনাজ পারভিন লাকী’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি এক সময় অপরাধ করেছি শাস্তিও পেয়েছি। আমি এখন কোন অপরাধের সাথে জড়িত নই। আমার মেয়ে জামাই ষড়যন্ত্র করে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।”

ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হয়তো কেউ আমার মোবাইল ফোন নিয়ে ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কথা বলেছে, আমি এসবের কিছুই জানিনা”।

তবে ইতিপূর্বে মাদক নিয়ে আটক ও কারাবরণের কথা অকপটেই স্বীকার করেন লাকী। তিনি বলেন, তার মেয়ের সাথে মেয়ে জামাইয়ের দাম্পত্য ঝামেলা চলছে। সম্প্রতি মেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করায় ষড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা রটনা করছেন বলে অভিযোগ করেন লাকী।

এদিকে মরণ নেশা এই মাদকের আসক্তি হতে রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান সহ জড়িতদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানান এলাকায় বসবাসরত সর্বস্তরের সাধারণ জনগন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকতা বলেন, কক্সবাজার শহরের খুচরা ও পাইকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। অচিরেই এসব চিহ্নিত ইয়াবা ও মাদক কারবারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার শহরে মাদক ব্যবসা রোধে পুলিশ সর্বদা সতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

সূত্রঃ দৈনিক আপনকন্ঠ (প্রথম প্রকাশ)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ