মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় নিহত দুই: টেকনাফে গাড়ি ভাঙচুর, ৬ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ


 কক্সবাজার অফিসঃ

কক্সবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় ২ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এতে মহেশখালীতে ও কুতুবদিয়ায় দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মহেশখালীর কুতুবজুমের ২টি, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপের ২টি ও টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের ২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে।এর মধ্যে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় মহেশখালীর কুতুবজুম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ কামাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে আবুল কালাম (৩২) নামে একজন নিহত হয়েছে।

এছাড়া বেলা সাড়ে ১২টায় ব্যালেট পেপার ছিনতাইকালে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম (৩৫) নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ব্যালেট ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস, আইনশঙ্খলা বাহিনী ও নানা সূত্রে জানা যায়, কুতুবজুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছছুরকাঘাত ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় কুতুবজোমের পশ্চিম পাড়া গ্রামের ছোট মিয়ার ছেলে আবুল কালাম নিহত হয়েছে। ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের কক্সবাজার সদর হাসাপাতাল আনা হয়েছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ কামাল বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকরা কুতুবজুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামিয়ুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্র দখল নিতে পরিকল্পিতভাবে গোলাগুলি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর করা অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারররফ হোসেন খোকন বলেন, প্রায়ই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে শেখ কামালের সন্ত্রাসী বাহিনী। খবর পেয়ে ভোটার ও তার সমর্থকরা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রে গেলে নৌকার প্রার্থীর ক্যাডাররা গুলি করেছে।

তিনি আরো বলেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জামিয়ুস সুন্নাহ দারুল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী ফুটবল প্রতীকের ফরিদুল আলম ও টিউবওয়েল প্রতীকের জহিরুল ইসলামের সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহতের মৃতদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
এদিকে কুতুবদিয়ার উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে আব্দুল হালিম (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছে।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুতুবদিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মাঝে আহত ১৮ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শরীফ।

নিহত আব্দুল হালিম বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু লোক ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এটি জটলার ভেতর ডুকে যান হালিম। ছিনতাই ঠেকাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর এক সদস্য গুলি চালালে আব্দুল হালিম আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওমর হায়দার ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টাকালে আব্দু হালিম নামে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের লাশ কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, পুলিশের গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনছিপ্রাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লম্বারবিল এমদাদিয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। সড়ক অবরোধ ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্থানীয়রা।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরফানুল হক চৌধুরী বেলা ১টার দিকে লম্বাবিল ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেন। তারা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও এজেন্টদের অভিযোগ শোনেন। তাৎক্ষণিক দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী।

মেম্বার পদপ্রার্থী মো. জিয়াবুল হক অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে সুন্দরভাবে ভোট চলছিল। ঘণ্টাখানের মতো ভোট গ্রহণের পর মেম্বারের ভোট ছাড়া বাকি দুই পদে ভোট চলবে ঘোষণা দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরফানুল হক চৌধুরী। এ কথা শোনার সাথে সাথে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।

কারণ চাইতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যালট ছিনতাইয়ের সাথে আবদুল বাছেত (বর্তমান মেম্বার) সরাসরি জড়িত।

জানা গেছে, উনছিগ্রাং ও লম্বাবিল মিলে ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে মোট প্রার্থী ১৩ জন। উনছিপ্রাং কেন্দ্রে ২৬৩৯ ভোট। মেম্বার পদপ্রার্থী সংখ্যা ৯ জন। লম্বাবিল কেন্দ্রে মোট ১৯৩২ ভোট। এই এলাকার মেম্বার প্রার্থী ৪ জন। আবদুল বাছেত উনছিপ্রাং এলাকার। নিজ এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে ব্যালট ছিনতাই করায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

লম্বাবিল কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার দেব জ্যোতি রুদ্র বলেন, সকাল থেকে ভোটাররা খুব সুন্দরভাবে ভোট দিচ্ছিল। হঠাৎ উনছিপ্রাং ভোটকেন্দ্রের প্রভাবে পুরো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া তছনছ হয়ে যায়।

সংরক্ষিত (৩,৫,৬) ওয়ার্ডের প্রার্থী হাসিনা আকতার (বক মার্কা) বলেন, আমরা সব প্রার্থী পরস্পর সম্প্রীতি রক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে ছিলাম। হঠাৎ করে আবদুল বাছেতের ব্যালট ছিনতাইয়ের খবরে মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ