উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ রড-সিমেন্টের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি : সৈয়দপুরে কর্মহীন হাজারও নির্মাণ শ্রমিক


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

বাজারে লাগামহীনভাবে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে নির্মাণ কাজে ভাটা পড়েছে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে অনেক সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ। রড-সিমেন্টের উর্ধ্বমুখী দাম এবং ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলমান অনেক উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। একইভাবে নির্মাণ সামগ্রীর যথেচ্ছা দামে ভবন নির্মাণও বন্ধ করে দিয়েছে ভবন মালিকরা। 

এদিকে মূল্য বৃদ্ধির কোপে বেকার হয়ে পড়েছে সৈয়দপুরের কয়েক হাজার নির্মাণ শ্রমিক। নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় কাজ নেই তাদের। ফলে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বর্তমানে তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। তাদের ভাষায় ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকায় এবং কাজের পরিধি কমে যাওয়ায় তারা বিপদে পড়েছে।

জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলায় নির্মাণ কাজের সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাস থেকে দফায় দফায় রড ও সিমেন্টের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় অধিকাংশ নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কাজ কর্মে বিরূপ প্রভাব পড়ায় প্রায় ৫ হাজার নির্মাণ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এসব শ্রমিকদের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। সূত্র মতে, কয়েক সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে বর্তমানে বস্তা প্রতি সিমেন্টের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় স্ক্যান সিমেন্ট বস্তা প্রতি বেড়েছে ১০০ টাকা। কিছুদিন আগেও ছিল ৪৭০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে কোম্পানী ভেদে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকা থেকে ৪৬০ টাকা প্রতি বস্তা। বাজারের সিমেন্টের দাম লাফিয়ে বৃদ্ধি বাড়ছে।

সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে স্থানীয় ফ্রেস সিমেন্টের প্রতিনিধি ইঞ্জি. সাজেদুর রহমান সাজু বলেন বহির্বিশ্বে সিমেন্ট তৈরীর কাঁচামালের দাম বাড়ায় এবং ট্রান্সপোর্ট খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সিমেন্টের দাম দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগে বিএসআরএম রডের প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৫৯ টাকা যা বর্তমানে ৭৬.৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একেএস রড ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭৫.৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য কোম্পানীর রডের দামও সমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ব্যাপারে মেসার্স আবির ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী মো. মশিউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পুরনো জাহাজের স্ক্রাপ কম থাকার কারণে রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে এই রডের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম বড় কারণ। রড ও সিমেন্টের দাম বাড়ার পাশাপাশি ঢেউটিন ও সাটারিং কাঠেরও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে লাগামহীন, কিন্তু মজুরী বাড়ছে না নির্মাণ শ্রমিকদের। বরং প্রতিদিন তারা কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়ছেন। সৈয়দপুর চৌধুরী টাওয়ার মার্কেটের মোড়ে কাজের জন্য বসে থাকা মুন্সিপাড়ার রাজমিস্ত্রির রাজুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নির্মাণ কাজের জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ঠিকাদারসহ ভবন মালিকরা কাজকাম বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমরাও কাজ পাচ্ছি না। এ সময়টাতে আমাদের হাতে কাজ জমা থাকে। কাজ করেও ফুরসত পাই না। কিন্তু এবার কাজই পাচ্ছি না। কাজ না পেলে আমরা খাবো কি? অথচ এ কথা শুধু রাজমিস্ত্রী রাজুর নয়, কাজের জন্য বসে থাকা দিলশাদ, চান, ওবায়দুলের মত অনেকে। সবার চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর নির্মাণ শ্রমিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি মো. জাহেদুল ইসলাম শ্রমিক বেকার হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সৈয়দপুরে প্রায় ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক রয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে প্রায় অর্ধেক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধের উপক্রম বলা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে বলে শংকা ব্যক্ত করেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ