শহরের প্রধান সড়ক গুলোতে কড়াকড়ি থাকলে ও অলি-গলিতে ঢিলেঢালা ভাবে কাটছে লকডাউন


আক্তার কামাল সোহেল 

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হলেও কক্সবাজার শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কে লকডাউন এর ছিটেফোঁটারও দেখা যায়নি।

অন্যদিকে লকডাউন কার্যকরে প্রশাসন প্রধান সড়কে যেইভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে,তেমন কোনো বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়েনি জনবহুল এলাকার অলিগলিতে।

যার সুযোগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ও মাস্ক পরিধান করা নাই বলে চলে।

শহরের অভ্যন্তরীণ ও জনবহুল সড়কের একটি গোলদীঘির পাড় চত্বর, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গোলদীঘির পাড়ের খুশগল্প- আড্ডা,পুকুর পাড়ের চারপাশে অস্থায়ী নানা রকম ভ্রাম্যমাণ দোকান খোলা রাখায় লকডাউনের প্রভাব তেমন একটা পড়েনি বললেই চলে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেখা গেছে,গোলদীঘি পাড় এলাকায় অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই জমজমাট করে যানবাহন চলাচল। প্রধান সড়কে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি কারণে গোলদীঘির পাড়,হাসপাতাল,সড়ক,স্টেডিয়াম সড়ক,মোহজের পাড়া,ঘোনার পাড়া দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতেছে লোকজন। শহরের প্রধান সড়ক ব্যতিত অন্য অন্য জায়গা অলি গলিতে যেমন,বৈদ্য ঘোনা,হিন্দু পাড়া,ঘোনার পাড়া,বাদশার ঘোনা,পাহাড় তলীতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও সাধারণ মানুষের আধিপত্য। অনেককেই দেখা গেছে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতেছে বিনা কারণে,খোলা রয়েছে বিভিন্ন দোকান-পাট।

শহরের অনেক সচেতন নাগরিক এই বিষয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নানা রকম মন্তব্য করতেও দেখা গেছে।

এই বিষয়ে মধ্যম ঘোনার পাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি জনাব,সাইমুন আমিন বলেন এলাকার অলিগলিতে চেকপোস্ট বা প্রশাসনের অবস্থান কঠোর না করলে,লকডাউনের সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। এইভাবে চললে শহরের মানুষ সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

অন্য দিকে কক্সবাজার শহরের শহীদ মিনার সড়ক এলাকার তিন রাস্তার মোড়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা। হেঁটে শহরের ঝাউতলার দিকে যাচ্ছিলেন কায়ছার। তিনি পড়েন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে।কায়ছারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার কারণ। হাসিমুখে তাঁর জবাব—লকডাউন দেখতে মাঠে নেমেছেন তিনি।এরপর বিধিনিষেধ অমান্য করার অভিযোগে আদায় হয় জরিমানা, ফেরত পাঠানো হয় উল্টোপথে।

কায়ছার বলেন, লকডাউন দেখতে এসে ২০০ টাকা জরিমানা গুনতে হলো। এ টাকায় ঘরে বসে আম খাওয়া যেত।

সাত দিনের কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিন মঙ্গলবার ও সকাল থেকে শহরের কলাতলী, সুগন্ধা পয়েন্ট, সৈকত সড়ক, প্রধান সড়কের ঝাউতলা, লালদিঘির পাড়, বাজারঘাটা, বাসটার্নিমাল, বাইপাসসহ বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশের টহল ছিল। এ ছাড়া সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের একাধিক তল্লাশিচৌকি। এর মধ্যেও কিছু মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত লোকজনকে আটকিয়ে আদায় করছেন জরিমানা।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাদিয়া সুলতানা বলেন, লকডাউন দেখতে এসে গত ষষ্ঠ দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৯৩ জন ব্যক্তিকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা। লোকসমাগম ঠেকাতে মাঠে তৎপর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে প্রতিদিন মাঠে নামেন জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অকারণে যাঁরা রাস্তায় নামছেন, তাঁদের আটক করে জরিমানা করা হচ্ছে। জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও লকডাউন কার্যকর করতে ইউএনওদের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৪৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন,শহরের অলিগলিতে ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ