উত্তরবঙ্গ এখন দেশে দ্বিতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিনত পঞ্চগড়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকল্প পরিচালক


মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

প্রতিকূল পরিস্থিতেও দেশের চা শিল্প উৎপাদনে সক্ষম। করোনা পরিস্থিতিতে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা থেকে প্রতিয়মান হয়েছে। ২০২০ সালে পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় সমতলের ১০টি চা বাগান ও ৭ সহস্রাধিক ক্ষুদ্রায়তন চা চাষীর চা বাগান থেকে ১ কোটি ৩ লক্ষ বা ১০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর চায়ের জাতীয় উৎপাদন হয়েছে ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের সমতলের চা বাগান থেকে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতেও এ বছর চা উৎপাদনে সবোর্চ্চ রেকর্ড হয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গ এখন চা উৎপাদনে দ্বিতীয় চা অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সিলেটের পরেই। চট্টগ্রাম এখন তৃতীয়।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঊর্ধবতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০২০ সালে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী (উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায়) জেলার ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা বাগান, ৭,৩১০টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে (নিবন্ধিত ১,৫১০টি) মোট ১০,১৭০.৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব চা বাগানসমূহ থেকে ২০২০ সালে ৫,১২,৮৩,৩৮৬ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। যা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এর ১৮টি চলমান চা কারখানায় ১ কোটি ৩ লক্ষ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ১,৪৮৯.৮৯ একর চা আবাদী বৃদ্ধি পেয়েছে ও ৭.১১ লক্ষ কেজি চা বেশি উৎপন্ন হয়েছে। 

এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ক্ষুদ্রায়তন  নিবন্ধিত ৯৯৮ টি, অনিবন্ধিত ৫ হাজার ৫০০ টি, চা বাগান ৯ টির, অনিবন্ধিত ১৬ টিতে  আট হাজার,৬৪২ একর জমিতে চার কোটি ৬০ লাখ, ৫১ হাজার ১৭৬ কেজি সবুজ চা পাতা থেকে ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার ৭০ কেজি তৈরি চার উৎপাদন হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় ক্ষুদ্রায়তন  নিবন্ধিত ৩৫৭ টি, অনিবন্ধিত  ৩০০ টি, চা বাগান নিবন্ধিত  ১ টি, অনিবন্ধিত একটিতে এক  হাজার ২৯৩ একর জমিতে ৪৫ লাখ,২৫ হাজার ৫০০  কেজি সবুজ চা পাতা থেকে চার লাখ ১৩ হাজার ৩৪০  কেজি তৈরি চার উৎপাদন হয়েছে।   লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় নিবন্ধিত ১৫৫ জন চাষী ২৩৫.৫৭ একর জমিতে সাত লাখ ছয় হাজার ৭১০ কেজি  সবুজ চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের খামার তত্বাবধায় ছায়েদুল হক, চা কারখানারা মালিক জাহেদুল হক বক্তব্য দেন।সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন ও ক্ষুদ্র চা চাষী মতিয়ার রহমান, আনিসুজ্জামান নতুন চা পাতার ন্যায্য মূল্য সেচ সুবিধা ও সার সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এসব নিশ্চিত হলে দিন দিন চায়ের চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

ড. মামুন জানান, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা। দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চাষিদের সল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষিদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’ হাতে কলমে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে ইতিমধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এ আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, চাষের নানান রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ বছর ক্ষুদ্র চাষিরা তাঁদের বাগানের উৎপাদিত কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় তাঁরা চা চাষে উৎসাহিত হয়েছে, চা বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের যতœ নিয়েছে। এছাড়াও পাতার দাম ভাল পাওয়ায় নতুন নতুন চা আবাদীও বাড়ছে। এতে উত্তরাঞ্চলের জেলা সমূহের মানুষের যেমন একদিকে দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে তেমনি প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় উত্তরবঙ্গের সকল চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চা বাগান পরিচর্যা ও পাতা তোলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর ফলে ২০২০ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ