মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ
পঞ্চগড় জেলা শহরের করতোয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কিন্ডারগার্টেনের আদলে পরিচালিত হচ্ছে। এ বিদ্যালয়ের মাসিক বেতন ৫০০ টাকা। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি দুই হাজার ৫০০ টাকা। করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসেই বেতন পরিশোধ করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন এমন অনিয়ম চললেও বিদ্যালয়টি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টি ১৯৮৪ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেঁষেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে এটি সরকারীকরণ হয়। সরকারি হওয়ার পরও বিদ্যালয়টি এখনো চলছে কিন্ডারগার্টেন আদলে। বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি দুই হাজার ৫৫০ টাকা। এর সঙ্গে জানুয়ারি মাসের বেতন আগাম জমা দিতে হয়।
অর্থাৎ বিদ্যালয়টিতে পড়া শুরু করতেই একজন শিক্ষার্থীকে গুনতে হয় তিন হাজার ৫০ টাকা। আর প্রতি মাসে বেতন বাবদ দিতে হয় ৫০০ টাকা। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। কিন্তু প্রতি মাসেই বেতন পরিশোধ করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। শুধু এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাস অর্ধেক বেতন ২৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
সাত বছর ধরে এমন অনিয়ম চলে এলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে পরিদর্শনেও যান না প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কোনো কর্মকর্তা। তাই অবাধে চলছে অভিভাবকদের পকেট কাটা। নিরুপায় অভিভাবকরা মাটির পুতুলের মতোই সহ্য করে চলেছে এসব অনিয়ম। এদিকে কৌশলগত কারণে বিদ্যালয়ের নাম একটু পরিবর্তন করে করতোয়া কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের নামে বেতনসহ অন্যান্য টাকা রসিদের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে।
করতোয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ হাত দূরেই বাড়ি মোটর শ্রমিক সাজ্জাদ আলমের। তাঁর ছেলে সিহান প্রথম শ্রেণির ছাত্র। শুরুতে বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করলেও মাসে মাসে বেতন দিতে না পেরে ছেলেকে দূরের ডোকরোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। শুধু সিহানকেই নয়, বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় বিদ্যালয়ের চারপাশের অসংখ্য দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েকে অন্যত্র পড়তে হচ্ছে।
করতোয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানে সাড়ে ৯০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সরকারি পাঁচজন শিক্ষক ছাড়াও মানসম্মত পাঠদানের জন্য আমাদের এখানে অতিরিক্ত ১৮ জন শিক্ষক ও ১২ জন কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্যই আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন নিতে হচ্ছে।’কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতন পঞ্চগড়ের পরিচালক ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার শিল্পী রাণী মোদক বলেন, ‘আমাদের ওপর থেকে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে নিষেধ রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় বাড়তি শিক্ষক নিয়ে পাঠদান করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিচ্ছে বলে জেনেছি। যেহেতু প্রশাসন ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছে, তাই আমরা এতে হস্তক্ষেপ করি না। এটা অনিয়ম হলেও ভালো প্রতিষ্ঠান বলে আমরা পজিটিভলি নিয়েছি।
0 মন্তব্যসমূহ