তেতুঁলিয়ায় অপরুপ রুপে সাজে সাজছে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাসপোর্ট ছাড়াই দেখে যান


মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ
 

দেশের উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড়ের নয়নিভিরাম তেঁতুলিয়ায় দেখা মিলছে হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুর দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও এবার আগে -ভাগে অক্টোবরের শেষে দিকে দেখা মিলছে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য। 

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। তবে স্থানীয়দের দাবি চলতি বছরের প্রথম আজ দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।জানা যায়, দুই মেরু রেখার বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। 

আর সূর্যের সব রঙেই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। ।তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। 

তাছাড়া তেঁতুলিয়া থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৪ কিলোমিটার। হিমালয়ের পাদদেশে তেঁতুলিয়া অবস্থিত হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরু বা মাঝামাঝিতে দেখা গেলেও আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কারণে   অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকালে হঠাৎ করে দেখা গেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।

তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা এলাকার বাসিন্দা নাইবুল ইসলাম জানান, তেঁতুলিয়া থেকে প্রতিবছর খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।আগে নভেম্বর মাসে আমরা দেখতে পেতাম কিন্তু এবার অক্টোবরের শেষের দিকে তথা আজ সকালে দেখতে পেলাম কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।নীলফামারীর ডিমলা থেকে তেঁতুলিয়ায় বেড়াতে আসা ইদ্রিস আলী নামের এক পর্যটক জানান, 

আমি গত বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেঁতুলিয়ায় আসলেও দেখতে পারিনি, কিন্তু আজ হঠাৎ তেঁতুলিয়ায় এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেলাম। দেখে অনেক ভালো লাগলো মনে হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছে গিয়ে দেখে আসলাম।তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মেঘমুক্ত আকাশে রূপালি চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। 

আকাশ মেঘমুক্ত থাকা এবং উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হচ্ছে।তেঁতুলিয়া ময়নাগুড়ি টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক সবুজ জানান, মাঝে মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। চা বাগান এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এখানেও অনেক পর্যটক ভীড় করেন শীত কেবল নামছে। 

পুরোপুরি শীত নামলে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।পাসপোর্ট আর ভিসা ছাড়াই বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর সূর্যোদয়ের সময় দিনের প্রথম সূর্যকিরণের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসতে শুরু করেছেন তেঁতুলিয়ায়। ভোরে উষার সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রোদ পড়ে সেই রোদ যেন ঠিকরে পড়ে পর্যটকের চোখে। হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার নানা রুপ দেখা যাচ্ছে। একই অঙ্গে অনেক রুপ এই কাঞ্চনজঙ্ঘার। 

প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করে। দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। দৃষ্টিশক্তি  থাকলে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার নানা রুপ লাবণ্য দেখতে পাওয়া যায়। যা প্রকৃতিপ্রেমীদের আরও মুগ্ধ করে তুলছে। উত্তরের আকাশে নয়নাভিরাম হিমালয় মূলত বরফে ঢাকা সাদা মেঘের মতোই। 

সেই সঙ্গে রয়েছে পিরামিডের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া। নানা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র (আকাশ পথে) ১১ কিলোমিটার। 

গত বছর বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট  দিয়ে প্রচুর মানুষ ভারতের এই পাহাড় দেখতে গেছেন। এবার করোনার কারণে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধ রয়েছে।জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা নেপাল এবং সিকিমের সীমান্তে অবস্থিত। পৃথিবীর উচ্চতার দিক থেকে প্রথম সারির যে ৩টি পর্বত হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত সেই পর্বতমালায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। আর পর্বত কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফুট উচ্চতায় ২য় এবং ৩য় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। 

হিমালয় পর্বতের এই অংশটিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমল বলা হয়ে থাকে। এর পশ্চিমে তামূর নদী, উত্তরে লহনাক চু নদী এবং জংসংলা শৃঙ্গ এবং পূর্ব দিকে তিস্তা নদী অবস্থিত। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে মাসে বিৃটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথম আরোহণ করেন। ১৯৮৬ সালের ১১ জানুয়ারি জের্জি কুকুচজকা এবং ক্রিজটোভ উয়িলিকি শীতকালে প্রথম আরোহণ করেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু জানান, প্রতিবছর তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। 

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় এসে ভিড় জমায়। পিক কর্নারে এসে বেশিরভাগ পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন। তাই উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পিকনিক কর্নার নতুন করে সাজানো হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ