পানের বরজে স্বাবলম্বী পঞ্চগড়ের চাষীরা

মো. আবু নাঈম, পঞ্চগড়: 
দেশের সর্ব উত্তরের কৃষি নির্ভর জেলা পঞ্চগড়ের গ্রামীণ অর্থনীতি দিন দিন চাঙ্গা হচ্ছে। চা এবং কমলার মত বাণিজ্যিক ভাবে পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষকেরা। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে। 

এখানকার উৎপাদিত পান সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। পানের বরজ করে ইউনিয়নের পাহাড়বাড়ি, নালাগঞ্জ, জিন্নাতপাড়া, পাইকানীপাড়া, গইচপাড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক চাষীর জীবন চিত্র বদলেছে। দুই শতাধিক সদস্যের সমন্বয়ে পান চাষী সমিতি নামের একটি সংগঠনও রয়েছে তাদের। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খরের বেড়ায় তৈরি পানের বরজে সাড়ি সাড়ি খুটিতে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পান গাছ। করছে সৌন্দর্য বর্ধনও। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে পঞ্চগড়ে ৩৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। চাষীরা জানান, প্রায় দেড় যুগ ধরে এ এলাকায় চাষ হচ্ছে এই অর্থকরি ফসল। 

একটি বরজে সঠিক পরিচর্যা করলে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত অনায়াসেই পান উৎপাদন সম্ভব। বছরে একর প্রতি উৎপাদন ব্যয় ৫-৬ লাখ টাকা হলেও বিক্রি হয় প্রায় ১২-১৫ লাখ টাকা। জিন্নাতপাড়া এলাকার পান চাষী কামাল হোসেন বলেন, প্রায় দশ বছর আগে ৫০ শতক জমিতে পানের বরজ করি। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ১২-১৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়। 

একই এলাকার ফজলুল করিম নামের আরেক জন বলেন, চলতি মৌসুমে পানের দাম কম হলেও উৎপাদন বেশি। তবে শীতকালে পানের বাজার চাঙ্গা থাকে। গইচপাড়া এলাকার চাষী শাহাদাত হোসেন বলেন, সপ্তাহে দুই দিন হাড়িভাসা বাজারে পানের হাট বসে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে পান নিয়ে যায়। চাহিদা ভালো থাকায় বাজারজাত করতে বেগ পেতে হয়না। 

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পান চাষী সমিতির সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, এ এলাকার কৃষকেরা দিন দিন পান চাষে ঝুঁকছেন। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে চাষীদের সংখ্যা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় বহুল হওয়ায় অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও পারছেনা পানের বরজ করতে। তিনি আরো বলেন, পান চাষীদের জন্য যদি আলাদা কোন সরকারি ঋণ সহায়তা দেয়া হতো তাহলে পানের আবাদ বৃদ্ধিসহ এলাকার কৃষকদের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতো। 

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সেলিম কবির বলেন, সবসময় পান চাষীদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। উৎপাদন ভালো করতে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে। পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, পানের চাষ বাড়াতে নানা ভাবে চাষীদের সহায়তা দিচ্ছেন তারা। 

তিনি বলেন, রোগ-বালাই দমনেও কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত চাষীদের পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ