রোজকার কিছু ভাবনা

ছোটবেলায় পড়েছিলাম,
"প্রথম যেদিন এসেছিলে ভবে 
কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিল সবে।  
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন।" 

কি দিনকাল আসলো! যোগ্যতম ব্যাক্তিগুলো মানুষের মঙ্গলের জন্য,মানুষের সেবা করার পদে থেকে পৃথিবী ত্যাগের সময় পৃথিবীর মানুষগুলো খুশিতে যেন হাত তালি দিয়ে বেড়াচ্ছে।। 

এমনতো হওয়ার কথা ছিল না!  বিদায়বেলা হবে চোখের জলে ভেসে। মায়ার কথা ভেবে, মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজের প্রচেষ্টাগুলোর কথা ভেবে মানুষের মনে হাহাকার জাগবে অন্তিম যাত্রাপথের মানুষটির জন্য। কি অদ্ভূত!  আমরা কি এখন মানুষ হতে রোবটে পরিণত হলাম!  

স্রষ্টা প্রতিটা মানুষের কর্মফল নিজ নিজ হাতে ধরিয়ে দিবেন। পৃথিবীর মানুষগুলো অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য করলেও স্রষ্টার কাছে কোন বৈষম্য নেই। আগে কিংবা পরে তিনি ঠিক ঠিকই যার যার পাওনা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ব্যালেন্স করে দিবেন। প্রকৃতির বিচারে কোন ঠকানো নেই বিশ্বাস করি। তবুও আমি নিজ হতে আমাকে কষ্ট দেওয়া কারও জন্য স্রষ্টার কাছে বসে অমঙ্গল কামনা, অভিশাপ দিতে বসিনা কিংবা মৃত্যু কামনা করিনা । সেটা যদি আমার এক্স হয় তার ক্ষেত্রেও। প্রতিটা মানুষ তার স্বপ্নের সমান বেঁচে থাকুক। এই স্বপ্নে যদি অন্যায় থাকে তার রিওয়ার্ডও স্রষ্টার কাছে আছে। বিশ্বাসীমাত্রই এই বিশ্বাসের বাইরে নয়।কেন আমার এত উল্লাসে থাকতে হবে মানুষের চলে যাওয়ায়! কিংবা "কেন এই হিংসা-দ্বেষ, কেন এই ছদ্মবেশ ---"

কারও কর্মের জন্য আমার অভিশাপ দেয়ার কিছুতো নেই!আমার অভিশাপ না পড়ুক কিন্তু তার কর্মফলতো পাওনা থাকবেই। তবে কেন কারও চলে যাওয়াতে সে কি করেছিল, হেনতেন বলে মানুষের এত চেঁচামেচি! কেউ কি পারবে অনন্তকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকত!চেঁচামেচি করে আপনি কি মহৎ হয়ে গেলেন!
নিজের দিকে দৃষ্টি দিন। আপনার সামাজিক অবস্থান, পদে থেকে আপনি কী করেছেন? জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। 

বাঁচার যদি সখ জাগে তবে মানুষ হউন, উদার হউন। এমনভাবে নিজেকে তৈরি করুন যেন আজ আপনি যে কারণে অন্যের মৃত্যুর পরও উল্লাস করছেন, আপনার ক্ষেত্রে তা যেন না ঘটে। 

এত কথা বলতে আসিনি।প্রথমাংশে লেখা কাব্যের লাইনগুলো মাথায় ঘুরছিল গতকাল থেকে।অন্যের কষ্টে দুঃখ প্রকাশ, সহমর্মিতা না দেখাতে পারুন, মৌন থাকার চেষ্টা করুন। তাতে মানুষ শ্রেণী হতে উঁচূতে না উঠলেও নীচুতে পতিত হবেন না। অতিমানব সবাইতো হতে পারে না।

লিখতে বসে ভাল কথাই মনে পড়ে গেলো। আমার মেয়ে মালিহা দশবছর হয়েছে। সে এখন এই কথাটার ভার নিতে পারবে। আজ তাকে এই কাব্যের গূঢ় কথাটাই শোনাবো। মা হিসেবে আমার দায়িত্ব এমন সব কথাগুলো তার কাছে পৌঁছে দেয়া। সে মানুষ হবে, না অমানুষের মতো মানুষের বিদায়ে, কষ্টে উল্লাস করবে সেটা সময়ের হাতে। আমার কর্তব্য আমি করে যাই।

লেখকঃ
রিজিয়া বেগম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ