কাজী সামছুজ্জোহা মিলন,নওগাঁ।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলাকে এক সময় বলা হত স্বপ্নের উপজেলা শহর। কারন উপজেলা সদরে ছিল ডাবলওয়ে রাস্তা,রেলিং, ফুটপাত, সোডিয়াম লাইটসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনের ফুলের গাছ। কালের বিবর্তনে আজ সব ধ্বংস। নওগাঁ জেলার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত মানের রাস্তা ছিল এই উপজেলা শহরে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজ প্রতিটি রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত, খানা খন্দে ভরপুর। কোন উপায়ে যাওয়ার মত অবস্থা আর কোনো রাস্তায় নেয়। উপজেলা সদরের আখেড়া হতে বরেন্দ্র অফিসের মোড় পর্যন্ত,মাছের মোড় হতে ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে বগের মোড়, সেখান থেকে পোস্ট অফিস মোড়, পোস্ট অফিসের মোড় থেকে জাহাঙ্গীরপুর কলেজ, পোস্ট অফিস থেকে দশ কলোনী সড়ক, হাউজ বিল্ডিং থেকে আহলে হাদিস মসজিদ, লিচু বাগান থেকে জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজ পর্যন্ত, ঘোষপাড়া মোড় থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত, মাছের মোড় থেকে মাতাজি রোডের রাস্তা,ভূমি অফিসের রাস্তা, রেজিস্ট্রি অফিসের রাস্তা, মডেল স্কুলের রাস্তা, দুলাল পাড়ার রাস্তা, কলোনি পাড়ার প্রতিটি রাস্তা, পোস্ট অফিস মোড় থেকে মধ্যবাজার হয়ে মেইন রোডের মোড় পর্যন্ত রাস্তা, লাইব্রেরী এলাকা থেকে গার্লস স্কুলের রাস্তা, হাইস্কুলের মোড় থেকে কলেজে যাবার রাস্তাসহ প্রতিটি রাস্তায় খানা খন্দে ভরপুর। চলতি বর্ষা মৌসুমে এসব রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় প্রতিটি নাগরিকের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কিভাবে এগুলোর পরিবর্তন হবে তার কোন সঠিক জবাব পাওয়া যায় না। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ প্রতিদিন এসব রাস্তায় চলাচল করলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ দীর্ঘ একযুগেও নেননি। ফলে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী, অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতালে যাওয়া রোগী,হাট বাজারে আসা গ্রামের সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত ব্যাক্তিবর্গ মহাদেবপুরে আসার পরেই এই শহরকে নিয়ে ব্যাপক বিরূপ মন্তব্য করেন। কিভাবে উপজেলা শহরের রাস্তাঘাট এভাবে নষ্ট হয়েছে তা নিয়ে প্রতিটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সর্বশ্রেণীর মানুষ বলেন খুব দ্রুত যেকোন উপায়ে যেকোনো অর্থায়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যর নৈতিক দায়িত্ব এসব রাস্তা মেরামত করা। তা না হলে এলাকাবাসী সরকারের উন্নয়নের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার একাধিক সাধারণ জনগণ। উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা বিশ্বাস বলেন, উপজেলা সদরের শিবগঞ্জ মোড় থেকে শিবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ ১৫ বছরেও উন্নয়ন হয়নি। মানুষেরা হেটে যেতে পারেন না। উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের বাবু ও ময়েন বলেন, কুঞ্জবন পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে ছাতড়া হয়ে নিয়ামতপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাবার রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। দীর্ঘদিনেও কোন সংস্কার কাজ হচ্ছে না। শিক্ষক নাজমুল, রফিক উদ্দিন ও রুবেল আহমেদ বলেন, স্কুল পাড়ার কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায়না। কলেজপাড়ার শাহজাহান বলেন, কলেজ পড়ার কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায়না। ঘোষপাড়া গ্রামের এনামুল ও ফিরোজ বলেন, ঘোষপাড়ার কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায়না। দুলাল পাড়া গ্রামের এনামুল, খলিল, সারোয়ার ও রুবেল বলেন, গ্রামের কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না, মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সভাপতি মনিরুল হক মনি বলেন,বাসস্ট্যান্ডের কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না, কলেজ পাড়ার সাত্তার ও শওকত বলেন, হাউস বিল্ডিং এর মোড় থেকে আহলে হাদিস মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। ছাত্র শাহজাহান, আব্দুল্লাহ, স্বাধীন, হামজা রোহিত, বেলাল, ফাহিম বলেন শহরের কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করার মতো অবস্থা নেই। ১ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কাজী ফেরদৌস বলেন, প্রতিটি রাস্তা জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চৌধুরী দুলাল বলেন, ভূমি ও রেজিস্ট্রি অফিসের চলাচলের রাস্তার একেবারে বেহাল অবস্থা। ভুক্তভোগীদের চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়। তিনি এগুলো মেরামতের দাবি জানান।উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াছাত হায়দার টগর বলেন, সদরের প্রতিটি রাস্তা খুব দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। সরকার দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অনুকূল চন্দ্র সাহা বুদু বলেন, শহরের প্রতিটি রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সরকার চেষ্টা করছে দ্রুত এগুলো সংস্কার করার। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন বলেন, খুব দ্রুত শহরের রাস্তাগুলো সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। শহরের রাস্তাগুলোর সংস্কার করা হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে এ অর্থবছরে তেমন একটা কাজ করা সম্ভব হয়নি। পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা হবে বলেও জানান। অপরদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে উপজেলা সদরের অবস্থা খানা খন্দে ও পানিতে ভরে থাকবে এমনটি মনে করছেন সর্ব শ্রেণি পেশার মানুষেরা।
0 মন্তব্যসমূহ