করোনাযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী আবু তাহের সিদ্দিকী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন

মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই দিনরাত সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চার সদস্যের একটি টিম। আর টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আরমান হোসেন রনি। 

টিমের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আবু তাহের সিদ্দিকী, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) মামুনুর রশীদ এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট মো. আল-আমিন। তারা  করোনা সংক্রমণ রোগীর নমুনা সংগ্রহ, 

তাদের নমুনা নীলফামারী সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছানো, আক্রান্তদের আইসোলেশন ও লকডাউন নিশ্চিত করছেন।  সম্প্রতি এক বিকেলে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস কক্ষে বসে কথা হয় মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট আবু তাহের সিদ্দিকীর সঙ্গে। 

তিনি বলেন “ভাই কি আর বলব, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই একদিনের জন্যও নিজ বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারিনি। সকালে বাসা থেকে নাস্তা বের হই। কাজ শেষে একেবারে রাতে বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেতে হয়েছে। 

গত শুক্রবার (২৬ জুন) বৃষ্টিপাতের কারণে করোনার নমুনা সংগ্রহ করতে যেতে পারিনি। তাই দীর্ঘদিন পর বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে পেরেছি। তাদের সঙ্গে বসে তৃপ্তি সহকারে খেয়েছি দুপুরের খাবার। 

আর এভাবে করোনা পরিস্থিতিতে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের কথা ব্যক্ত করলেন নমুনা সংগ্রহকারী মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট মো. আবু তাহের সিদ্দিকী। বর্তমানে তিনি সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন। 

তিনি স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে ১৯৮৯ সালে ১১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। আর গত ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এরপর তিনি ২০১৫ সালে ঢাকাস্থ ইন্সটিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি থেকে তিন বছরমেয়াদী মেডিক্যাল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। 

সেই থেকে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই)  হিসেবে অত্যন্ত সততার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে আসছেন তিনি। বর্তমান বৈশ্বিক জীবনঘাতী করোনার সংক্রমণ শুরু থেকে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য আরও বেড়ে গেছে। 

নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আবু তাহের সিদ্দিকীকে স্বাস্থ্য বিভাগের টিমে থেকে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে অফিসে যান। এরপর আগের দিনের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুমেন্ট (ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম) পরিধান করে নমুনা সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন। 

এ সময় সঙ্গে থাকে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ। এরপর নমুনা সংগ্রহের পর দাপ্তরিক কাজ শেষে নমুনা নিয়ে আবার ছুঁটতে হয় নীলফামারী সিভিল সার্জন দপ্তরে। সেখানে নমুনা জমা করে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায় তার। 

তবে বাসায়  ফিরে তিনি স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে প্রথমে নিজের পরিধেয় পোষাক খুলে পরিস্কারের ব্যবস্থা করেন। এরপর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে তবেই নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। তারপরেই রাতের খাবার খান তিনি। এ রকম রুটিনে গত ৩/৪ মাস যাবৎ চলছে তাঁর জীবনযাপন। আবু তাহের সিদ্দিকী বলেন, গত ৩ এপ্রিল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে তাঁর। 

আর ৭ এপ্রিল সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর বক্শীপাড়া গ্রামের অসুস্থ  মো. হাফিজুল হক বিটুলের  নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত ৯ এপ্রিল তাঁর (বিটুল) করোনা ভাইরাস পজিটিভ ফলাফল আসে। 

এ কারণে নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে একটানা ১৮ দিন বাসায় যাওয়া হয়নি তাঁর। অফিসের একটি কক্ষে রাত যাপন করতে হয়েছে। বাসা থকে শুধুমাত্র তিন বেলা খাবারটুকু আসতো। খাবার পৌছে দিত তাঁর ছেলে। 

নমুনা সংগ্রহ করতে কখনও অসুস্থ আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে আবার কখনো হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে গিয়ে ভর্তি থাকা রোগীদের কাছে যেতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৭১টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি ও তাঁর সহকর্মী। 

একদিনে সর্বোচ্চ ২৪টি পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। রোগীর নমুনা সংগ্রহের পর তা যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নীলফামারী সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছে দিতে হয় তাকেই। তবে চলতি জুন মাস থেকে নমুনা পৌঁছে দেওয়ার  কাজে তাঁর সঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্য দুইজন কর্মচারী  সংযুক্ত হয়েছেন। 

এখন তারা তিনজন মিলে পালাক্রমে তাঁদের সংগৃহিত নমুনা সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়াও করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসার পর সংক্রমিত ব্যক্তিকে উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে নিয়ে গিয়ে ভর্তি এবং তাদের বাড়ি লকডাউনে সহযোগিতা করতে হচ্ছে। 

মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মো. আবু তাহের সিদ্দিকী তাঁর চাকুরির পাশাপাশি অবসরে বিভিন্ন বিষয়ের লেখালেখির সঙ্গেও ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রপত্রিকা নিয়মিত কবিতা, গল্প ছাড়াও স্বাস্থ্য ও সাম্প্রতিক নানা বিষয়াদির ওপর লেখালেখি করেন তিনি। 

সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় যে, চলমান করোনাকালে তিনি নমুনা সংগ্রহ  ও পৌঁছানোর মধ্যদিয়েই তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য শেষ করেননি। তিনি  বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ফেসবুকে আইডি থেকে সৈয়দপুর উপজেলার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আপডেট তথ্য উপাত্ত দিয়ে চলেছেন। 

আর এসব দেখে সৈয়দপুর উপজেলাবাসীসহ দেশ-বিদেশের মানুষ সৈয়দপুরের করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে  সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার জানান, মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আরমান হোসেন রনির নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিমের সকল সদস্যই তাদের কাজে অত্যন্ত দায়িত্বশীল। 

মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আবু তাহের সিদ্দিকীসহ সবাই ন্যয় নিষ্ঠার সাথে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ