সংবাদ প্রকাশের পর সাদুল্যাপুর অর্থ সহায়তার তালিকার অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু


আশরাফুল ইসলমা গাইবান্ধাঃ 
যমুনা টিভিসহ  বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ১১নং খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার তালিকায় অনিয়ম-স্বজন প্রীতি আর সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা আদায়ের অভিযোগের সরেজমিনে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী শামীমের বিরুদ্ধে এই স্বজন প্রীতি ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে।

১০ জুন বুধবার দুপুরে স্থানীয় সরকারের গাইবান্ধার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মোছা. রোখছানা বেগম এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্তের সময় সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নবীনেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে, মঙ্গলবার বিভিন্ন গনমাধ্যমে অনিয়ম ও অর্থ আদায়ের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারের পর জেলা জুড়ই শুরু হয় তোলপাড়। পরে বিকেলেই অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য (ডিডিএলজি) মোছা. রোখছানা বেগমকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন।

এছাড়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও তালিকা তৈরীতে অনিয়ম-স্বজনপ্রীতির কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও তালিকা যাচাই- বাছাইকারী শিক্ষকদের পত্র পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মোছা. রোখছানা বেগম প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।

তদন্তে তালিকায় অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি আর সুবিধাভোগীর নামের পাশে নিজের ও স্বজনদের মোবাইল নম্বর জুড়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী, পরিষদের উদ্যোক্তা ফিরোজ কবীর এবং ব্যক্তিগত সহকারী রাজ্জাকের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এছাড়া সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা আদায়ের ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের দায় এড়িয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে নানা যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এছাড়া তদন্তের সময় প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তাপ্রাপ্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার একাধিক সুবিধাভোগীর কাছেও বিস্তারিত অভিযোগ আর তাদের বক্তব্য শোনেন তদন্ত কর্মকর্তা।

পাশাপাশি ফুলবাড়ি গ্রামের কয়েকজন ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে ও টাকা আদায়ের সত্যতা পান তদন্ত কর্মকর্তা।

এসময় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বিস্তারিত সঠিক তথ্য- প্রমাণ তুলে ধরেন অনেক ভুক্তভোগী। তদন্ত কার্যক্রমে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা ছাড়াও তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বরত কয়েকজন শিক্ষকের বক্তব্যেও লিপিবদ্ধ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত কার্যক্রমে এসব অভিযোগের সত্যতা আর বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ পেলেও তদন্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক রোখছানা বেগম ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে দ্রুত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

এদিকে, তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত করাসহ ভুক্তভোগীদের তদন্তের সময় উপস্থিত না হওয়ার জন্য নানা চাপ দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানর আরিফুর রহমান চৌধুরী ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর পরেই তদন্তের অভিযোগ আর তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে

বক্তব্য দেয়ায় কয়েকজন ভুক্তভোগীকে নানাভাবে ভয়ভীতিও দেখায় চেয়ারম্যানের লোকজন। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের দাবি,সরেজমিনে সাক্ষ্য প্রমান তুলে ধরায় তদন্ত কার্যক্রমে সকল ধরণের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তাই সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবিও স্থানীয় এলাকাবাসীর।

উল্লেখ্য, করোনা প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দুস্থ-অসহায় ও কর্মহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা মোবাইলে ২৫ শত টাকা তালিকায় খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের ৫৯৪ জনের নাম তালিকাভুক্ত হয়।

কিন্তু সেই তালিকা নিজের স্ত্রী-মেয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহারসহ স্বজন ও পছন্দের লোকজনকে অন্তভূক্ত করেন চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী। তালিকার সুবিধাভোগী ১২ জনের নামের পাশে চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত সহকারী রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর জুড়ে দেন।

এছাড়া তালিকায় দুই নারী সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন এমনকি একাধিক স্বচ্ছল-বিত্তশালী আর রাজনৈতিক নেতাদের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ