চিরচেনা সেই ‘ঈদ’ ব্যস্ততা নেই দর্জি পাড়ায়

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ আসন্ন ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে চিরচেনা সেই ব্যস্থতা নেই লালমনিরহাটের দর্জি পাড়ায়। সদ্য শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও সুফল পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, প্রতিবছর রমজান শুরু হতেই ঈদ উল ফিতরের নতুন কাপড় তৈরির ভিড় বেড়ে যায় দর্জি পাড়ায়। ঈদ যত নিকটে আসে। দর্জিপাড়ার কারিগরদের ব্যস্থতাও ততই বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর সেই চিরচেনা রুপের পরিবর্তন ঘটেছে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে। আগের মত ব্যস্থতা নেই দর্জি পাড়ায়। করোনা ভাইরাসের লকডাউন ব্যস্থতার মতই কেড়ে নিয়েছে জেলার দুই সহস্রাধিক দর্জির উপার্জন। সদ্য শপিংমল ও দোকানপাট নিদিষ্ট সময়ের জন্য খুলে দেয়ায় দর্জি পাড়ায় কিছুটা কাজ বাড়লেও নেই আগের মত ব্যস্থতা। ফলে দোকান ভাড়া আর ঈদের খরচ নিয়েও চিন্তিত দর্জিরা। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় ভাড়ার চাপ ছিল না। কিন্তু দোকান খুলে যাওয়ায় দোকান ভাড়ার চাপও তৈরি হয়েছে। এটা শুধু দর্জি পাড়ায় নয়, সকল ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া নিয়েও চিন্তিত। অল্প ক্রেতার ঈদ মার্কেট খুলে যতসামান্য আয় করে এখন খরচের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা জানান, বড় বড় ব্যবসায়ীরা দোকানে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা পন্য ঈদ মার্কেটে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলেও ক্ষুদ্র বা অল্প পুজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সামান্য পুজির পণ্য কেনাবেচা করে জিবিকা নির্বাহ করেন। লকডাউনের পর দোকান খুলে দেয়ায় একদিকে ক্রেতা কম অন্যদিকে দোকানে পণ্য না থাকায় তেমন বিক্রি নেই। ব্যবসা করছেন বড় বড় পাইকারী প্রতিষ্ঠান। তারা পাইকারী বন্ধ করে খুচরা বিক্রি বাড়িয়েছেন। ফলে করোনার ঝুঁকিতে শপিংমল দোকান খুলে দিয়েও খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এর ওপর রয়েছে দোকান ভাড়া পরিশোধের চাপ। লালমনিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ের ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, ঈদের জন্য রমজানের আগে মোকাম থেকে কাপড় নিয়ে আসা হয়। এ বছর লকডাউন ও পরিবহন বন্ধ থাকায় মোকাম থেকে কাপড় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। দোকানে যা ছিল তাই নিয়ে দোকান খুলেছি। পুরাতন দেখে ক্রেতারা ভিরছেন না। করোনা ঝুঁকি নিয়ে দোকান খুললেও আশানুরুপ ব্যবসা হচ্ছে না। এরপরও গত তিন মাসের দোকান ভাড়াও দিতে হচ্ছে ঘর মালিককে। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকলে ভাড়া দিতে হত না। কিন্তু দোকান খুলেছি। তাই ভাড়াও দিতে হবে। দোকান খুলে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দর্জিরা জানান, সল্প পরিসরে দোকান খুলে দেয়ায় যারা ঝুঁকি নিয়ে কেনাকাটা করছেন। তাদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাকে ঝুঁকে পড়েছেন। এরপরেও যারা কাপড় তৈরীর জন্য দর্জির দোকানে যাচ্ছেন। তাদের সকলের চাহিদামত সময় কাপড় ডেলিভারি দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ফেরত দিতে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দোকান বন্ধ করতে গিয়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও সুতাসহ সকল সরঞ্জামের মুল্য দ্বিগুন বেড়ে যাওয়ায় পোষাক তৈরীর খরচ বেড়েছে। বর্ধিত খরচে পোশাক তৈরিতেও আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। ফলে লকডাউনে মার্কেট খুলেও তেমন সুফল নেই দর্জি পাড়ায়। তারা সমাগমহীন পরিবেশে দীর্ঘসময় দোকান খুলে রাখার দাবি জানান।  টেইলার মাস্টার সন্তোষ কুমার বলেন, আগে রমজান শুরু হলে কাজের ধুম পড়ে যায়। এবার করোনায় সেই ব্যস্থতা নেই। সীমিত পরিসরে মার্কেট খুলে দেয়ায় কাজ আসলেও তা সময় মত দেয়া যাচ্ছে না। সুতাসহ পোশাক তৈরির সকল সরঞ্জামের দাম দ্বিগুন বেড়েছে। বর্ধিত দামে পোশাক তৈরিতেও অনীহা অনেকের। নির্ধারীত সময়ে দোকান বন্ধ করায় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। দর্জির দোকান সমাগমহীন। তাই শারীর দুরুত্ব বজায় রেখে দীর্ঘ সময় কাজের অনুমতি চান দর্জিরা। অন্যথায় দোকানে নতুন কাপড় কিনেও তৈরির অভাবে মানুষ ঈদে পরিধানে ব্যর্থ হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ