পর্যটকদের চুরি হওয়া ৩ দামী মোবাইল ১৩ দিন পর উদ্ধার করলো জেলা প্রশাসন

আক্তার কামাল সোহেলঃ
১৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার বেলা ১’৫০ মিনিট। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট। ময়মনসিংহ থেকে আসা পর্যটক মাসুদ ও তানভীর স্বপরিবারে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে এসেছিলেন। সমুদ্রের পরিচ্ছন্ন লোনা পানিতে নিজেদের একটু খানি ভিজিয়ে নিতে নেমেছিলেন লোনা পানিতে। নামার আগে তাদের নিজেদের ব্যবহৃত ৩ টি দামী মোবাইল ফোন সেট ও ৫ শ’ নগদ টাকা বীচের জনৈক ফটোগ্রাফারকে রাখতে দিয়ে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে যান। তাদের ভাষ্য, ঐ কথিত ফটোগ্রাফারই সুকৌশলে তাকে মোবাইল ফোন সেট গুলো রাখতে দেওয়ার জন্য প্রচন্ড আগ্রহ দেখায়। সমুদ্রে গোসল সেরে তাঁরা উপরে উঠেই তাঁদের চোখ ছানাবড়া। যে ফটোগ্রাফারের কাছে ৩ টি দামী মোবাইল ফোন সেট ও ৫ শ’ নগদ টাকা বীচের রাখতে দিয়েছিলো তাকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ঐ ফটোগ্রাফারকে অনেক খুঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ময়মনসিংহ থেকে আসা মাসুদ ও তানভীর অনেকটা হতাশ হয়ে বিভিন্নজনে পরামর্শে বীচের কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হেল্প ডেস্কে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগ পাওয়ার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বীচের দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরীর রাত্রে আর ঘুম হয়না। মোবাইল ফোন সেট গুলো উদ্ধার না হলে কক্সবাজারবাসী ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পর্যটকদের মাঝে একটা নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে। তাই ময়মনসিংহের পর্যটকদের চুরি হওয়া মোবাইল ফোন সেট গুলো উদ্ধার করতেই হবে। উদ্ধারকাজে বাধ সাজলো যে কথিত ক্যামেরাম্যান সুগন্ধা বীচ থেকে তাদের ৩ টি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়, তারা কিন্তু সেই ক্যামেরাম্যান সম্পর্কে প্রশাসনকে কোন তথ্য দিতে পারেননি।

তারপরও জেলা প্রশাসনের বীচের দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী হাল ছাড়েননি। দীর্ঘ ১৩ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রাণান্ত চেষ্টার পর অনেক কলাকৌশলে বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর সেই ক্যামেরাম্যানকে সনাক্ত করা হয়। ক্যামেরাম্যানের নাম রাশেদ। তার বাড়ি কক্সবাজার শহরের বাদশার ঘোনা। বীচে ফটোগ্রাফিতে তার কোন অনুমোদন নেই। তার চুরি করা দামী মোবাইল ফোন সেট ৩ টি ইতোমধ্যে কয়েক হাত পরিবর্তন হয়ে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তাই উদ্ধার প্রক্রিয়া আরো জটিল হয়ে গেলো। কিন্তু নাছোড়বান্দা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সহ ৫/৬ জন লোক ও বীচ কর্মীদের নিয়ে হন্য হয়ে খুঁজে খুঁজে বের করতে থাকে, একের পর এক হাত বদল হওয়া এ ৩ টি দামী মোবাইল ফোন সেট ক্রয়কারীদের। কথিত অননুমোদিত ফটোগ্রাফার রাশেদের সূত্র ধরে সারাদিন চেষ্টার পর অবশেষে ফোন সেট ৩ টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী এ ৩টি দামী মোবাইল ফোন সেটের মালিক ময়মনসিংহের মাসুদ ও তানভীরের কাছে তাদের মোবাইল ফোন সেট উদ্ধারের কথা জানায় এবং উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন সেট গুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য কক্সবাজারে আসতে অনুরোধ জানায়। মাসুদ ও তানভীর খবর পেয়ে নাইট কোচেই তাঁরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন বলে  তাঁরা জানিয়েছেন। তাদের চুরি হওয়া মোবাইল ফোন সেট গুলো ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশা শতভাগ ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাদের ৩ টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করতে চায়নি। তাদের জন্য মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি’ বলে  বলেন। মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার হওয়ার পর তাঁরা ফিরে পাচ্ছেন, এ খবরে তারা ভীষন খুশী।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী  বলেন, পর্যটকদের সেবা দেওয়া, সেবার মান বৃদ্ধি করা, যেকোন পর্যটকদের যেকোন ধরনের হয়রানি বন্ধ করা আমাদের কর্তব্য ও পেশাদারিত্ব। পর্যটকদের এই সেবা দেওয়া ও যেকোন ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর ও সর্বদা সচেষ্ট। তিনি বলেন, পর্যটকদের মোবাইল ফোন সেট চুরি করা অননুমোদিত ফটোগ্রাফার রাশেদকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। খুব শিঘ্রী অননুমোদিত ফটোগ্রাফার, হকার ও অবৈধ দোকানীকে বীচ এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে অভিযান চালানো হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী  আরো বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বরও ৪ জন হারিয়ে যাওয়া শিশুকে জেলা প্রশাসন ও বীচ কর্মীরা খুঁজে বের করে তাদের অভিবাবকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উখিয়ার ইনানী বীচের প্রবেশপথে সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ