সৈয়দপুরে শুরু হয়েছে পবিত্র আশুরার আনুষ্ঠানিকতা


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ

তাজিয়া তৈরী সম্পন্ন। সাজসজ্জার কাজও শেষ। গেট তোরণসহ সৈয়দপুরের ইমামবাড়াগুলোকে আলোকমালায় সজ্জিত করা হয়েছে। ওইসব ইমামবাড়ার খলিফাসহ কমিটির সদস্যরা পার করছেন ব্যস্ত সময়।

বাসা বাড়ির বিভিন্ন বয়সী মানুষজন (শিশু থেকে বৃদ্ধ) তাদের মান্নত সম্পন্ন করতে এখন প্রস্তুত। গতকাল মঙ্গলবার (৭ মহররম) থেকে শুরু হয়েছে সকল আনুষ্ঠানিকতা। শেষ হবে শুক্রবার (১০ মহররম)। ওইদিন পালিত হবে পবিত্র আশুরা। সারাদেশের চাইতে সৈয়দপুরে ব্যতিক্রমভাবে পালন হওয়া আশুরা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কারণে পবিত্র আশুরার কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে আশুরার যাবতীয় কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৈয়দপুর কারবালা ও ইমামবাড়ার কমিটিগুলো। উপজেলা ও থানা প্রশাসনের নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

ত্যাগের মহিমায় অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর মাস মহররম। ইতিহাসে অসংখক ঘটনার স্মৃতি জড়িত রয়েছে এ মাসে।  আর মহররম মাসের ১০ তারিখ পালিত হয় পবিত্র আশুরা। প্রতি বছরের মতো এবারও নানা আয়োজনে পালিত হবে দিবসটি।  তবে এসব হবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে। এদিকে মহররম মাসের চাঁদ ওঠার সাথে সাথে অবাঙ্গালী অধ্যুষিত সৈয়দপুরের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় নানা প্রস্তুতি নেয়। ওইদিন থেকেই মানুষজন রোজা রাখাসহ নিয়াজ-ফাতিহার মাধ্যমে নানা কর্মসূচি পালন করে। তবে মহররমের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৭ তারিখ থেকে।

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে এসব আনুষ্ঠানিকতা। এদিন শহরের প্রায় ৪০টি ইমামবাড়াসহ  কারবালায় গিয়ে শিশু থেকে শুরু করে যুবক ও বৃদ্ধরা ইমাম হোসেইনের দুলদুল ঘোড়ার সাজে শরীরে পাইক, বাদ্ধি (সুতার দড়ি ও পিতলের ঘন্টা) পরিধান করেছে। তারা চারদিন একই কাপড়ে থেকে পবিত্র আশুরার (১০ মহররম) সূর্যাস্তের আগে হাতিখানা ও গোলাহাট কবরস্থান সংলগ্ন প্রতিকী শাহাদায়ে কারবালায় গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো খুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইমামবাড়াগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (৯ ও ১০ মহররম) ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, ধর্মীয় আলোচনা সভা, দুস্থদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য ও তবারক বিতরণ করবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বিকেল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হবে শরবত। আশুরা উপলক্ষে কারবালা প্রান্তসহ বিভিন্ন ইমামবাড়া এলাকায় বসছে বিভিন্ন মৌসুমি দোকানপাট যাকে বলা হয় মহররম মেলা।

আশুরার দিন বিকেলে শহরের পার্বতীপুর রোডের শিয়া মসজিদ কলোনী এলাকা থেকে পুলিশ প্রহরায় শিয়া সম্প্রদায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোক র‌্যালী বের করবে। ওই র‌্যালীতে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নিবে।

এদিকে আশুরার আয়োজনকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান বলেন, আশুরা উপলক্ষে কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইমামবাড়ার কমিটির সভাপতিদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিল বন্ধ রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মপ্রাণ শহরবাসী ইমামবাড়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন, আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোটা শহর ও কারবালা এলাকায় পুলিশী টহল চলছে। এছাড়া নেয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ