রংপুরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান সর্বস্তরের বাঙ্গালী


শরিফা বেগম শিউলী, রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

রংপুর নগরীতে একুশের প্রথম প্রহরে হাজারো মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে রংপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রাত ১২ টা ১ মিনিটে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পন শুরু হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদদের।

রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওহাব ভূঁইয়া, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মেস্তফা, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, মেট্রো পুলিশ কমিশনার আলিম মাহমুদ , জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি সহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। এরপর একে একে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। করোনার কারণে সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ভোরে প্রভাত ফেরী ও সারাদিন দিন ব্যাপী আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ সারাদেশে সকাল থেকেই দিনের শুরুতে শহীদ মিনারকে সাজিয়ে গুছিয়ে টাটকা ফুলের পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে দেশে নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা,সংস্কৃতির মানুষ একসাথে কন্ঠের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে গাইছে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো অমর একুশের ফেব্রুয়ারির গান। আজ দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কর্মসূচি হিসাবে নিয়ে রেখেছে।এছাড়াও,দেশের সব দলীয় কার্যালয় থেকে ফুলের তোড়া হাতে র‍্যালী নিয়ে এগোতে থাকে শহীদ মিনারের দিগে।এতে করে সম্মান চিত্তে দেশের বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর মতামত ও ভেদাভেদ ভূলে ভাষা আন্দোলনের শহীদ ভাইদের প্রতি গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বরণ করেন। 

জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে যারা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভক্তচিত্তে গভীর ভালোবাসায় আজকের দিনে স্বরণ করেন বাঙালি জাতি। গৌরব ও প্রেরণা আর অহংকারের আমার অমর একুশে প্রতীকী,রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস, অমর ২১ শে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের গৌরবোজ্জ্বল মাসের একটি দিন। যা এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও অত্যন্ত সুপরিচিত।আর বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলনের অন্নন্য গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে আমার প্রাণের অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত,ও সফিউর,এবং জব্বারের মত বাংলার দামাল ছেলেরা।তাদের বুকের তাজা রক্তে রক্তিম বর্ণে রঙিন করে শৃঙ্খলামুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী মায়ের মুখের ভাষা বর্ণমালা,আমাদের মায়ের বাংলা ভাষা।

১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনমুখী ছাত্রদের ওপর তৎকালিন পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে সু-খ্যাত ও চিহ্নিত হয়ে আছে।  ১৯৫২ সালে আমার মায়ের বাংলা ভাষা ছিনিয়ে আনতে  শহীদ হয় সালাম, রফিক,বরকত জব্বার, ও শফিউল,সহ আরও অনেকেই।আর তাই আমার ভাইদের বুকের তাজা রক্ত বাংলার জমিনে সবুজ ভূখণ্ডে মায়ের ভাষা ও রাষ্ট্র ভাষা বাংলার জন্যে জীবন দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে বলে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালনে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর এই দিনে একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের ডাকে যে সংগ্রামের সূচনার সূত্রপাত ঘটেছিল,সেদিন মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ পেড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত ইতিহাসে পরিণতি লাভ করে।অমর একুশে ফেব্রুয়ারি,তাই বাঙালি জাতির কাছে অন্তহীন প্রেরণার মূর্ত প্রতীক হয়ে আজও স্বরণ করে আসছে। তৎকালিন সমাজে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালি জাতির ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটে, তারই সূত্র ধরে পূর্ববঙ্গের সেকালের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্ব মাসে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের দিকে ভাষার বাকবিতর্ক নিয়ে সীমিত পর্যায়ে শুরু হয় আন্দোলন।এবং তখনকার ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে।

তাইতো বাঙালির সে গৌরবে শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে যায় শহীদ মিনার। খালি পায়ে শিশির ভেজা শ্রদ্ধা নিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায় বাঙালির আবেগ।আর একুশের প্রভাত ফেরি আর কণ্ঠে অমর সঙ্গীত- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। আত্মসর্গকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে একইসঙ্গে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় শহীদদের স্বপ্ন পূরণে দেশ ও জাতির কল্যাণে একটি সুন্দর,সুখি,সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের  সোনার বাংলা গড়ে তুলতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি  অর্জনের প্রচেষ্টায় হউক শহীদের প্রত্যাশার প্রশান্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ