হৃদয় বিদারক মায়ের মৃত্যু শোকে মারা গেলেন দুই মেয়েও


মো. কামরুল ইসলাম কামু পঞ্চগড়ঃ
  

ঘটনাটি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের খলিফাপুর গ্রামর। ওই গ্রামের প্রয়াত প্রাণ কিশোর বর্মনের স্ত্রী বৃদ্ধা পঞ্চমী বেওয়া (৯০) মারা যান গত মঙ্গলবার সকালে। মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর ছয় মেয়ে মাকে শেষ দেখা দেখতে আসেন। বিকেলে স্থানীয় শ্মশানে ওই বৃদ্ধার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এরপর সব মেয়েই বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। 

হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে অচেতন হয়ে পড়েন বৃদ্ধার ছোট মেয়ে চৈতী রানী (৩০)। তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে। অসুস্থ্য বোনের চিকিৎসায় সাহায্য করার জন্য বড় বোন স্বরজনী বালাও (৫০) মাইক্রোবাসে উঠেন। গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষন পর স্বরজনী বালাও অসুস্থ বোধ করে অচেতন হয়ে পড়েন। 

ঠাকুরগাঁও যাওয়ার পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাইক্রোবাসেই মারা যান ওই দুই বোন। নিহত স্বরজনি বালা বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সুশীল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী এবং ছোট মেয়ে চৈতি রানী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফারাবাড়ি গ্রামের পলাশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী। মায়ের মৃত্যুর পর দুই বোনের মৃত্যুতে ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকারিয়া হাবিব বলেন, মঙ্গলবার সকালে মারা যান বৃদ্ধা পঞ্চমী বেওয়া। মারা যাওয়ার পর স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁকে দেখতে আসেন ছয় মেয়ে। মেয়েরা দিনভর মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছিলেন। বিকেলে পঞ্চমীর লাশ বাড়ির পাশের শ্বশানে সৎকার শেষ করে স্বামীর বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেয়ার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করে অচেতন হয়ে পড়েন সবচেয়ে ছোট মেয়ে চৈতি রানী। 

তারাতারি করে একটি মাইক্রোবাস এনে তাঁকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বজনরা। ওই মাইক্রোবাসে ছোট বোনকে সহযোগিতা করার জন্য বড় বোন স্বরজনি বালাও যাচ্ছিলেন। পথে স্বরজনি বালাও অচেতন হয়ে পড়েন। এর পর ঠাকুরগাও হাসপাতলে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মাইক্রোবাসেই দুই বোন মারা যান। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে তিনি জানান। 

মৃত পঞ্চমী বেওয়ার ছেলের ঘরের নাতি কামিনী কুমার রায় বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ঠাকুরমা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমার পিসিরা (ফুফুরা) আমাদের বাড়িতে আসেন। বিকালে সৎকার শেষ করে আমার তারা  সবাই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ আমার ছোট পিসি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেয়ার সময় বড় পিসিও ওই মাইক্রোবাসে উঠেন। কিছুক্ষণ পর তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

এরপর দুজনই পথেই মারা যান। তারপরও আমরা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার দুইজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ