ঋণ পরিশোধ করতে ২০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করল মা

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ

ঋনের টাকা পরিশোধ করতে একদিনের সন্তানকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় বিক্রী করে দিলেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হাসিনা বেগম। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামে। হাসিনা বেগম আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী। তিনি একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের মেয়ে।

জানা গেছে, ১৮/২০ বছর আগে একই গ্রামের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর সাথে বিয়ে হয় হাসিনার। কিন্তু হাসিনা ছিল জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন স্বামীর বাড়িতে থাকলেও পরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হাসিনার ঠাঁই হয় তালুক হরিদাস নয়াটারী বাবার বাড়িতে।

সংসারের খরচ বহন না করলেও স্বামী জোকতার সম্পর্ক রেখেছিল হাসিনার সাথে। এরই মাঝে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। বড় মেয়ে রোসনার বিয়ে দেন।

ফুঁটো টিনের উপর পলিথিন সাঁঠানো একমাত্র ঝুঁপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হাসিনা বেগম। করোনা কালে এবং মাঠে কাজ না থাকায় বেকার কৃষি শ্রমিক হাসিনা বেগম স্থানীয় ভাবে ঋন করে অনাহারে অর্ধাহারে সংসার চালান। দেনা হয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরই মাঝে গত মঙ্গলবার(৬ অক্টোবর) সকালে হাসিনা বেগম একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন।

অভাবে মাঝে সন্তানকে প্রতিপালনের চিন্তায় পড়েন হাসিনা। তবে তার ভাই নিঃসন্তান কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাঁধা দেন হাসিনা বেগম ও তার বড় ছেলে হাসান।

অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পত্তির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করেন। এতে হাসিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোরপুর্বক সন্তানকে তুলে দেন রাজাহাটের দম্পত্তির হাতে। 

নবজাতক ভাইকে আটকানোর চেষ্টা করে বাবার গালমন্দের শিকার হন হাসান। নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋনের ১০ হাজার পরিশোধ করেন হাসিনা বেগম। কিন্তু নাড়ি ছেড়া ধন হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছোট ভাইকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বড় ভাই হাসান বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে ঘর ছেড়ে চলে যায়।

হাসিনার বড় ছেলে হোটেল শ্রমিক হাসান বলেন, কষ্ট হলেও ভাইকে বিক্রি করতে নিষেধ করায় বাবা আমাকে ত্যাজ্জ্ব করার হুমকীসহ মারপিট করার চেষ্টা করেছে। অর্থকষ্টে নবজাতক বিক্রি করে মা এখন কান্না করছে। এ দুঃখে আমি বাড়ি ছেড়ে মালিকের হোটেলেই থাকি। টাকা ২০ হাজার পেলে ভাইকে ফেরত নিতে পারতাম। কিন্তু টাকা তো নেই।

হাসিনার ভাই কেরামত আলী বলেন, বিয়ের ১০ বছর অতিবাহিত হলেও আমাদের সংসারে সন্তান নেই। ইচ্ছা ছিল বোনের সন্তানকে নিতে। কিন্তু বোনের স্বামী টাকার বিনিময়ে নবজাতক ভাগিনাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হাসিনা বেগম বলেন, গরিব মানুষ খাবার পাই না। প্রতিবেশী অধিরের আত্নীয়ের কাছে দিয়েছি। তারা ভালভাবে দেখবে। আমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে গতকাল হাওলাতি(ঋনের) ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রোখসানারা মুক্তা বলেন, মুলত অভাবের কারনেই নবজাতককে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন হাসিনা বেগম। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছি। তাকে আর্থিক সহায়তা করলে মাতৃত্ব বিক্রি করতে হতো না।

এ বিষয়ে সারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে সন্তান বিক্রি করেছেন এক প্রতিবন্ধী নারী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ