মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাড়ির সীমানায় কাঠাল গাছের চারা রোপনকে কেন্দ্র করে ঝগড়ায় প্রতিবেশীর হাত থেকে পুত্রকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের আঘাতে নুর ইসলাম (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার সন্ধায় সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট ডাঙ্গাপাড়া মোজার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাতেই ওই মৃত্যুর ঘটনায় মৃতেুর পুত্র নুর আলম বাদি হয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা করেছে। মামলায় প্রতিবেশী গৃহকর্তা গিয়াসউদ্দিন(৫৫) তার স্ত্রী ও কন্যাসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রাতেই পুলিশ মামলার আসামি গৃহকর্তার স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৪৫) ও তাঁর মেয়ে আয়শা সিদ্দিকাকে (২৫) গ্রেফতার করেছে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মৃতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে গ্রেফতার দু আসামিকে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে একটি মহল বৃদ্ধ নুর ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রচার করলেও মৃতের পরিবারের দাবি তাঁকে আঘাত করায় সে মারা গেছে। থানায় দায়ের করা মামলা ও এলাকাবাসির সুত্র জানিয়েছে মৃত বৃদ্ধের ছেলে নূর আলম (৪৫) বুধবার বিকেলে তাদের বাড়ির সীমানায় কাঠাল গাছের চারা রোপন করে।
কিছুক্ষণ পর তার প্রতিবেশী মৃত জসিম উদ্দিনের পুত্র রেলওয়ে হিসাব বিভাগ অফিসের কর্মচারী গিয়াস উদ্দিনের (৫৫) স্ত্রী ফাহিমা (৪৫) গাছের চারা তাদের জমিতে রোপন করা হয়েছে দাবি করে তা তুলে ফেলে। পরে গাছের চারা উপড়ে ফেলার কারণ জানতে নূর ইসলাম ও তার ছেলে নূর আলম গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে ঝগড়া বাধে।
এসময় নুর আলমকে গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্যরা মারপিট করলে তাঁকে বাঁচাতে যায় বৃদ্ধ নুর ইসলাম। এসময় প্রতিপক্ষের ধাক্কায় নুর ইসলাম মাটিতে পড়ে মারাত্মক অাঘাত পায়। পরে তার পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বৃদ্ধ নুর ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বৃদ্ধ নুর ইসলাম মারা গেছে এ সংবাদে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মৃতের ছেলে নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে গিয়াস উদ্দিনের সাথে সীমানা সংক্রান্ত বিবাদ চলে আসছে।
ঘটনার দিন গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার এক পর্যায়ে গিয়াস উদ্দিন, তার স্ত্রী মেয়েরা আমার শশুরের গলা টিপে ধরেন এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এদিকে মৃত্যুর এ ঘটনায় রাতেই সৈয়দপুর থানায় ৩০৪ ধারায় একটি মামলা করেছেন মৃতের পুত্র নুর আলম। মামলায় ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলো- গৃহকর্তা গিয়াসউদ্দিন, তার স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৪৫), কন্যা আয়শা সিদ্দিকা (২৫), পারুল বেগম (২২) ও আসমানী (১৯)।
এ ঘটনায় পুলিশ ফাহিমা বেগম ও তার কন্যা আয়শাকে গ্রেফতার করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাহাট পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক মো. রেজওয়ানের সাথে কথা হলে তিনি জানান মৃত নুর ইসলামের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী মর্গে আনা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে আসল ঘটনা। মামলার দুই আসামি মা ও মেয়েকে নীলফামারী আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খানের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
0 মন্তব্য