নাজমুল
হাসান, নাটোর
নাটোরের
গুরদাসপুরে প্রায়
এক যুগ
ধরে চলছে
দুটি গ্রুপের
খুনাখুনি। দুটি
গ্রুপের প্রধানগণ
একে অপর
গ্র“পের
হাতে খুন
হবার পরও
থামেনি হানাহানির
ঘটনা। সর্বশেষ
গত ৩০
মে রাতে
কুপিয়ে শরীর
থেকে মিঠু
কানা নামে
এক যুবকের
পা বিচ্ছিন্ন
করার ঘটনায়
নতুন করে
আলোচনায় যোগেন্দ্রনগর
ও খুবজীপুর
গ্রাম। স্থানীয়রা
বলছেন বিবাদমান
দুটি পক্ষের
কারণে থামছেনা
খুন, রক্তপাত
আর হানাহানি।
পুলিশ বলছে
দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব
বন্ধে উদ্যোগ
নিচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে
গিয়ে জানা
যায়, নাটোরের
যোগেন্দ্রনগর গ্রামে
দুটি গ্র“পের
বিরোধে অসহনীয়
হয়ে উঠেছে
এখানকার পরিবেশ।
এই গ্রামের
জালাল মন্ডলের
পরিবারের সাথে
প্রতিবেশী মমিন
মেম্বারের বিরোধ
দীর্ঘ একযুগের।
মুলত অবস্থাসম্পন্ন
মমিনের কাছ
থেকে চাঁদা
আদায়কে কেন্দ্র
করেই এই
বিরোধের সুত্রপাত।
মমিন আর্থিক
দিক থেকে
স্বচ্ছল থাকায়
২০১০ সালের
দিকে প্রতিবেশী
জালাল মন্ডল
তার কাছ
থেকে মোটা
অংকের চাঁদা
দাবী করে।
মমিন জালালকে
টাকা দিতে
অস্বীকার করা
নিয়ে দুজনার
মধ্যে বিবাদের
সৃষ্টি হয়।
পরে এ
নিয়ে মমিন
মেম্বারের ছেলে
রফিকুল ইসলাম
উত্তেজিত হয়ে
জালাল মন্ডলকে
গালিগালাজ করে।
এর কয়েকদিন
পর রাতের
আঁধারে রফিকুলের
উপর হামলা
করে তার
হাত পা
ভেঙ্গে দেয়
জালাল ও
তার সহযোগিরা।
এ ঘটনায়
মমিন মেম্বার
বাদি হয়ে
গুরুদাসপুর থানায়
মামলা দায়ের
করলে স্থানীয়
জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে
মামলা রজু
হয়না। পরে
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে
আপোষ মিমাংসা
করা হয়।
তাতে জালালদের
আর্থিক জরিমানা
করা হয়।
এর কয়েকদিন
পরে জালাল
স্বশরীরে মমিন
মেম্বারের কাছে
গিয়ে জরিমানার
টাকা ফেরত
চায়। তখন
দুজনের মধ্যে
বিরোধ আরও
তীব্র হয়।
এক পর্যায়ে
লোকজন নিয়ে
মমিন মোম্বারের
বাড়ি ঘরে
হামলা চালিয়ে
ভাঙচুর চালায়
জালাল। তখনই
দুপক্ষ দুইটি
গ্র“পে
বিভক্ত হয়ে
পরে। প্রতিটা
গ্র“পেই
প্রায় ১০জন
করে সদস্য
যোগ হয়।
২০১১
সালে জালাল
মন্ডল দলবল
নিয়ে পুনরায়
মমিন মেম্বারের
বাড়ি আক্রমন
করে ভাংচুর
ও লুটপাট
চালায়। এক
পর্যায়ে জবাই
করে হত্যা
করে মমিনকে।
এঘটনায় মমিন
মেম্বারের ভাই
মজিদ বাদি
হয়ে জালালসহ
আটজনকে আসামী
করে হত্যা
মামলা দায়ের
করেন। সেই
মামলায় জালালকে
প্রধান আসামী
করে চার্জশীটও
দেয় পুলিশ।
২০১৩
সালে হত্যা
করা হয়
জালালের ভাতিজি
সফুরা বেগমকে।
এঘটনায় নিহত
সফুরার ভাই
রফিকুল ইসলাম
বাদি হয়ে
মমিনের ছেলে
আশরাফুল, রফিকুলসহ
কয়েকজনকে আসামী
করে মামলা
করে। ঐ
মামলায় অন্যতম
স্বাক্ষি ছিলেন
জালাল। এর
মধ্যে দুপক্ষের
মাঝে কয়েকদফায়
হামলা ভাংচুরের
ঘটনা ঘটে।
একই বছরে
পাশের খুবজিপুর
গ্রামে মমিন
মেম্বারের নাতি
মিঠুর সাথে
তার চাচা
শফিকুল ও
রফিকুল মধ্যে
কলহ সৃষ্টি
হলে জালালের
ছেলে বাবু,
সাবু ও
শিবলুরা তার
চাচাদের পক্ষ
হয়ে মিঠুর
পরিবারের লোকজনকে
মারপিট করে
এবং মিঠুর
দুই চোখে
খেজুরের কাটা
ঢুকিয়ে দেয়।
এতে মিঠুর
একচোখ স্থায়ীভাবে
নষ্ট হয়ে
তার নাম
মিঠু কানা
নামে পরিচিতি
পায়।
২০১৯
সালে মমিন
হত্যা মামলায়
হাজিরা দেবার
জন্য জালাল
মন্ডল বাড়ি
থেকে বের
হয়ে রাস্তার
উপর মমিন
মেম্বারের ছেলে
ও তার
সহযোগীরা জালালকে
কুপিয়ে মারাত্বক
আহত করে।
পরে তার
একহাত কেটে
নিয়ে চলে
যায়। পরে
হাসপাতালে নিয়ে
গেলে মৃত্যু
হয় জালালের।
এ ঘটনায়
জালালের ছেলে
বাবু মন্ডল
বাদি হয়ে
প্রতিপক্ষের ৯জনের
নাম উল্লেখ
করে একটি
হত্যা মামলা
দায়ের করেন।
সম্প্রতি
মমিন মন্ডলের
নাতি মিঠু
কানা তার
চাচা রফিকুল
ইসলামের মেয়ে
তানিয়াকে বিয়ে
করতে চায়।
কিন্তু মিঠু
বিভিন্ন অপকর্মের
সাথে জড়িত
থাকায় তার
সাথে বিয়ে
না দিয়ে
জালাল মন্ডলের
ছেলে শিবলুর
সাথে বিয়ে
দেয়। শিবলু
ও তানিয়া
ঢাকায় থাকতো।
কিন্তু করোনার
কারণে তারা
বাড়ি আসলে
মিঠু তানিয়াকে
পুণরায় বিয়ে
করতে চায়।
এই নিয়ে
পুরনো বিবাদ
আবার মাথাচাড়া
দিয়ে উঠে।
সেই সাথে
মিঠুর নানার
পরিবারের সাথে
জালালের পরিবারের
মাঝে হত্যাকান্ডের
ঘটনার জের
ধরে জালালের
ছেলে বাবু,
সাবু, শিবলু
একত্রিত হয়ে
মিঠু কানার
বাড়িতে হামলা
চালায়। তার
আগেই মিঠু
কৌশলে বাড়ির
পেছন দিয়ে
পালিয়ে যায়।
পরে গত
৩০ মে
রাতে মিঠু
বাড়ি থেকে
বের হয়ে
খুবজিপুর বাজারে
যাবার পথে
জালাল মন্ডলের
ছেলে বাবু
ও তার
সহযোগিরা মিঠু
মন্ডলের উপর
হামলা চালায়।
এসময় তাকে
এলোপাথারি কুপিয়ে
তার বাম
পা বিচ্ছিন্ন
করে পালিয়ে
যায়। পরে
তাকে উন্নত
চিকিৎসার জন্য
রাজশাহী মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে
ভর্তি করে।
এই ঘটনায়
মিঠুর বাবা
সাইদুল ইসলাম
বাদী হয়ে
জালাল মন্ডলের
ছেলে বাবুসহ
৬জনকে আসামী
করে মামলা
দায়ের করে।
স্থানীয়
অনেকেই বলেছেন,
বিবাদমান দুপক্ষই
অসহনসীল। তাদের
কারণে প্রায়ই
দাঙ্গা হাঙ্গামা
লেগে থাকে
গ্রামে। এলাকায়
শান্তি প্রতিষ্ঠা
করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনির
কঠোর হস্তক্ষেপ
চান তারা।
নাটোরের
দুর্নীতি প্রতিরোধ
কমিটির সভাপতি
আব্দুর রাজ্জাক
জানান, দীর্ঘ
এক যুগ
ধরে দুটি
পারিবারের মধ্যে
খুনাখুনি হচ্ছে।
এটা ঐ
এলাকার জনমনে
চরম আতংক
সৃষ্টি করছে।
এঘটনায় স্থানীয়
গণ্যমান্য ব্যক্তি,
জনপ্রতিনিধি ও
প্রশাসনের কঠোর
হস্তক্ষেপে বিবাদমান
দুইপক্ষকে নিয়ে
আলোচনা করে
মামলাসমুহ পর্যায়ক্রমে
উঠানোর মাধ্যমে
আপোষ-মিমাংসা
করা যেতে
পারে।
নাটোরের
পুলিশ সুপার
লিটন কুমার
সাহা জানান,
মমিন গ্র“প
ও জালাল
গ্র“পেরই
অতিত রেকর্ড
ভাল নয়।
দুটি গ্র“পের
প্রধানগণ একে
অপর গ্র“পের
হাতে খুন
হয়েছে। তারপরও
থামেনি হানাহানির
ঘটনা। দুগ্র“পেরই
৮ থেকে
১০জন করে
সদস্য আছে।
প্রতিশোধপরায়ণ হবার
কারণে
দুপক্ষই একাধিক
হামলা-লুটপাট
আর খুনের
আসামী। তাই
তদন্তে বিশেষ
গুরুত্ব দেয়া
হচ্ছে। এর
আগেও হত্যা
বা মারামারির
মামলায় আগামীদের
গ্রেফতার করে
জেলহাজতে পাঠিয়েছিল
পুলিশ। তারা
জামিনে এসে
পুনরায় কলহে
জড়িয়েছে। সর্বশেষ
মিঠু কানার
পা কেটে
নেবার ঘটনাতেও
আসামী গ্রেফতার
হয়েছে। দুই
গ্র“পের
বিরোধ নিরসনে
সামাজিক উদ্যোগ
নেবার কথাও
জানান তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ