জুয়াড়ির ছুরিকাঘাতে আহত যুবকের মৃত্যু, লাশ নিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ ও বাড়ি ভাংচুর


মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বখাটে জুয়াড়ির উপর্যুপরি  ছুরিকাঘাতে আহত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নাম আলমগীর (৩০)। 

এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী যুবক আলমগীরের হত্যাকারী বখাটে বাবু (৩০) ও তাঁর সহযোগিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরে (পাঁচমাথা মোড়) বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। পরে বিক্ষুদ্ধ লোকজন জুয়াড়ি বাবু ওরফে বাবুয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, শহরের হাতিখানা ও হাতিখানা ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা বাবু ওরফে বাবুয়া (২৬), মো. মনু (২৮), আদিল (৩০), নাসিম (২৬), মো. সামসাদ  (২৫), মো. ইব্রাহিম (২২), চঞ্চল (২১) ও মাহবুবসহ (২২) অজ্ঞাত যুবকরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রায় দিন শহরের রেলওয়ে লাইন এলাকায় মাদকসেবন ও জুয়া খেলতো। আর একই এলাকার মৃত. আইয়ুব আলীর ছেলে আলমগীর (৩০) তাদের এসব অসামাজিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতো। ঘটনার দিন গত ৩১ মে বিকেলে উল্লিখিত যুবকরা প্রতিদিনের মতো রেলওয়ে লাইনের ওপর বসে মুঠোফোনে টাকা দিয়ে লুডু খেলছিল। তাদের মুঠোফোনে লুডু খেলতে বাঁধা দেন হরেক মাল বিক্রেতা  আলমগীর (৩০)।

এ সময় জুয়াড়িরা তাঁর ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করে এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে বিকেল আনুমানিক ৫টা ৫৫ মিনিটের সময় হরেক মাল বিক্রেতা আলমগীর তাঁর বাড়ি থেকে বের হয়ে রেলওয়ে লাইনের ওপর দিয়ে সৈয়দপুর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় শহরের হাতিখানা আজিম উদ্দিন সড়কের বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডারের বিপরীতে পশ্চিম পাশে রেলওয়ে লাইনের ধরে ওঁৎ পেতে থাকা বখাটে সন্ত্রাসী বাবুয়ার নেতৃত্বে জুয়াড়িরা প্রতিবাদি আলমগীরের পথরোধ করে। 

এ সময় সংঘবদ্ধ জুয়াড়ির দলসহ আরো ৩/৪জন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। সেখানে হামলাকারী জুয়াড়িরা আলমগীরকে এলোপাাতাড়ি মারপিট করে। এসময় জুয়াড়ি বাবু ওরফে বাবুয়া  তাঁর সাথে থাকা চাকু আলমগীরের পেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। এ সময় আলমগীরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন দ্রুত ছুঁটে এসে মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে আলমগীরের কয়েকদফা অস্ত্রোপচার করা হলেও শারিরীক অবস্থার কোন উন্নতি না হলেও সেই থেকে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত আলমগীর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

এ ঘটনায় আহত আলমগীরের মামা আব্দুল মালেক বাদী হয়ে বাবু ও তাঁর অপর তিনভাইসহ ৮ জনকে আসামী করে গত ৩ জুন সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে, আজ সোমবার সকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলমগীরে মৃত্যু সংবাদ অল্প সময়ে গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। জুয়ার খেলায় বাঁধা দেয়ায় কারণে জুয়াড়িদের ছুরিকাঘাতে আলমগীরের মৃত্যুর ঘটনায় হাতিখানা এলাকার লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। আলমগীরের লাশ বহণকারী গাড়ির অপেক্ষায় লোকজন শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরে(পাঁচমাথা মোড়) এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে বিকেলে নিহত আলমগীরে লাশ সেখানে এসে পৌঁছুলে বিক্ষুদ্ধ শত শত নারী পুরুষ আলমগীর হত্যার বিচার ও জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে বিভিন্ন  শ্লোগান দেয়। এসময় তারা সেখানে লাশ রেখে প্রায় ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ সামবেশ করে। 

এ সময় তারা আলমগীর হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য বলেন নীলফামারী জেলা মাইক্রোবাস জিপ কার পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, নিহত আলমগীরের বড়ভাই জাহাঙ্গীর, সচেতন যুবক হিটলার শাহাজাদা প্রমূখ।এ সময় আলমগীরের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা তাঁর স্বামীর হত্যাকারী বাবুসহ তার সহযোগীদের  গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে বিক্ষুদ্ধ লোকজন আলমগীর হত্যার মুলহোতা বাবু ওরফে বাবুয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। 

এ সময় খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। উল্লেখ্য সন্ত্রাসী বাবু ওরফে বাবুয়া ও তার সহযোগীদের  ছুরিকাঘাতে নিহত আলমগীর পেশায় একজন হরেক মাল বিক্রেতা ছিলেন। তাঁর দুই স্ত্রী, ১ মেয়ে ২ ছেলে রয়েছে। এলাকাবাসী জানায় সবসময় শান্ত স্বভাবের ছিলো অালমগীর। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছপা হতো না সে। আর বখাটে সন্ত্রাসী বাবু ওরফে বাবুয়া এর আগেও অনেক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়েছে। তার অত্যাচারে এলাকার লোকজন অতিষ্ট। তাঁরা বাবুয়াকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ