মৌসুমিকে নিয়ে নানা প্রশ্ন, রহস্যের খোঁজে প্রশাসন

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গার্মেন্টসকর্মী মৌসুমী আক্তারের মৃত্যু ও তার লাশ তিস্তা নদীতে পাওয়ার ঘটনা ঘিরে জনমনে প্রশ্ন জমেছে অনেক। রংপুর মহানগর পুলিশ মৌসুমীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য তার বাবা গোলাম মোস্তফার কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু লাশ দাফন না করে নদীতে কারা ফেলে দিলো? লাশ যাতে এলাকায় নিয়ে আসা না হয় এজন্য কারা বুড়িমারীতে বিক্ষোভ করলো? সুস্থ মৌসুমি আক্তার কীভাবে ট্রাকে মারা গেল? ট্রাকচালক ও হেলপারকে আটকের পরও কী কারণে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিলো? এসব রহস্যময় প্রশ্নের উওর মিলছে না। পুরো ঘটনা নিয়ে মেয়ের বাবা গোলাম মোস্তফা, মা সাহেরা বেগম, তার দুই বোন শান্তনা ও রুমানা এবং লাশ পরিবহনকারী গাড়ির চালক ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এ মৃত্যুকে ঘিরে নানা প্রশ্নের উওর বের করতে ও প্রকৃত রহস্য খুঁজতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্তে নেমেছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা মৌসুমীর বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের একাধিক বার কথা বলেছেন। মৃত পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে ও একই উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী। গত ২৪ মে জেলার আদিতমারী এলাকায় তিস্তা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৌসুমী আক্তারের বাবা গোলাম মোস্তফার দাবি, তার মেয়ের লাশ করোনা রোগী সন্দেহে এলাকায় নিয়ে এসে দাফনে বাধা পাওয়ায় রংপুরের এক লাশ পরিবহনকারী গাড়ির চালকের কাছে লাশ হস্তান্তর করে দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি বুড়িমারীতে চলে আসেন। পরে ওই চালক লাশ কি করেছেন তা তিনি জানেন না। কিন্তু ওই লাশ পরিবহনকারী গাড়ির চালকের বক্তব্য একেবারে ভিন্ন। তিনি জানান, মৌসুমীর লাশ রংপুর থেকে পাটগ্রামের বুড়িমারী নিয়ে যাওয়ার পথে বড়খাতা এলাকায় তার বাবা লাশটি নামিয়ে নেন। ওই স্থানে লাশ নামিয়ে দিয়ে তারা গাড়ি নিয়ে চলে যান। তবে মৌসুমীর দুই খালাতো বোন শান্তনা ও রুমানার দাবি অন্যরকম। তাদের ভাষ্যে, মৌসুমীর লাশ যখন গাড়িতে তোলা হয় পাটগ্রাম নিয়ে আসার জন্য তখন ওই গাড়িতে তার খালু মৌসুমির বাবা ছিলেন। লাশ জলঢাকা নিয়ে আসা পর্যন্ত লাশের সাথে মৌসুমীর বাবা গাড়িতেই ছিলেন। এরপর সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যান লাশ এলাকায় নিয়ে আসার জন্য সহযোগিতা করেছেন। মৌসুমীর মা সাহেবা বেগম বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে যাই। চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আমার মেয়ের লাশ রংপুর থেকে পাটগ্রামে নিয়ে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কিন্তু পথিমধ্যে কে লাশ নদীতে ফেলে দিলো তা জানি না। লাশ এলাকায় নিয়ে আসার জন্য চেয়ারম্যান আমাদের সহযোগিতা করেছেন। বুড়িমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, একটি সুস্থ মেয়ে ঢাকা থেকে রংপুর আসার পথে কীভাবে মারা গেল? সেই লাশ পুলিশ তার বাবার কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করার পরও তিস্তা নদীতে কারা ফেলে দিলো? পাশাপাশি পুরো ঘটনা নিয়ে মৃত মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা, মা সাহেরা বেগম, তার দুই বোন শান্তনা ও রুমানা এবং লাশ পরিবহনকারী গাড়ির চালক ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য থেকে নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে মৌসুমীর মৃত্যুকে ঘিরে। তাই প্রকৃত রহস্য বের করতে প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে। এ ঘটনার সাথে যে-ই জড়িত থাক তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। একটি মহল আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে। পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত বলেন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। পুরো ঘটনা নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিষয়টি গুরুত্বর সহকারে তদন্ত করছেন। প্রকৃত রহস্য বের করতে একটু সময় লাগবে। উল্লেখ্য, মৌসুমী নামে এক গার্মেন্টসকর্মী গাজীপুর থেকে ট্রাকযোগে নিজ বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে ফেরার পথে ২২ মে ট্রাকে রহস্যজনকভাবে মারা যান। তার লাশ রংপুর তাজহাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে ২৩ মে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু লাশ দাফন না করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ২৪ মে মৌসুমীর লাশ লালমনিরহাটের আদিতমারী এলাকায় তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ