চকরিয়ায় প্রতিপক্ষের আগুনে পুড়ে ছাই বসতবাড়ী, প্রশাসনের অবহেলায় মানবেতর জীবনযাপন!

আব্দুল আলীম নোবেল ও মোঃ মনছুর আলম (এম আলম):
কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং এর আলীপুর পাড়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন পূর্বশত্রুতার জেরে অস্ত্রের মুখে নারী নাজেহাল সহ লুটপাট করে রাতের আধাঁরে বসতবাড়ী পুড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ৬ মার্চ গভীর রাতে ঐ এলাকার আবুল কাশেমের পুত্র মোঃ মাশুকের বসতবাড়ীতে এমন নারকীয় কাণ্ড ঘটায়। নারী শিশু সহ ঐ বাড়ীর লোকজন শেষ সম্বল হারিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও খোলা আকাশের নিচে আত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ঘটনাটি নিয়ে শুরু থেকে রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের চরম অবহেলা ও হয়রানীর অভিযোগও উঠেছে। সংশ্লীষ্ট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরহা মিলছে না এই ভুক্তভোগী পরিবারের। তাদের অসহায়ত্ব কান্নায় ভারি হয়ে আসছে আলীপুর পাড়ার আকাশ-বাতাস।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগি মাশুকের পরিবার অনেক বছর ধরে ক্রয়সূত্রে ঐ বসতভিটার মালিক। বিগত ৬/৭ বছর পূর্বে এই বসতঘরটি নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে তিনি। প্রতিপক্ষ ছৈয়দ আহম্মদ প্রঃ মামলা ছৈয়দ গং বিভিন্ন সময় বসতভিটাটি অবৈধভাবে দখলে নিতে পায়তারা করে আসছিল। স্থানীয় ভাবে সালিস বিচার সহ একাদিক বৈঠকে বসেও মাশুকের পক্ষে রায় দেয় বিচারকগণ। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে কোন সমাধান না হয়ে আদলত পর্যন্ত গড়িয়েছে। স্থানীয় বিচার ও আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসহায় মাশুকের মাথাগুজার ঠাই টুকু কেড়ে নিতে মরিয়া হয়ে একেরপর এক অপ্রীতকর ঘটনা ঘটিয়েছে মামলা ছৈয়দ গং। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ মার্চ মধ্যরাতে প্রতিপক্ষের একদল অস্ত্রধারী মাশুকের ঐ বসতবাড়ীর উঠানে জোরপূর্বক একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে। ঐ রাতেই মাশুকের মা ও স্ত্রী জান্নাতোল ফেরদৌসকে নাজেহাল সহ বসতঘর লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ভুক্তভোগী মোঃ মাশুক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ক্রয় সূত্রে তার বসতবাড়ীতেই বসবাস করেন তিনি। একই এলাকার মামলা ছৈয়দ গং তার এই বসত ভিটাটি অবৈধ দখলের জন্য পায়তারা চালিয়ে আসছিল। এই বিষয়ে একাদিকবার স্থানীয় ভাবে সালিস বৈঠকে মাশুক রায় পেলেও অবশেষে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। স্থানীয় সালিস ও আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ৬ মার্চ মধ্যরাতে মামলা ছৈয়দ (৫৫) তার ভাই মোঃ সেলিম (৫০), তার দুই পুত্র মোঃ ইউনুছ (২৮) এবং মোঃ ইব্রাহীম (৩০), একই এলাকার তৌহিদুল ইসলাম (১৯) ও আবদু ছফুর গং আরো ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী নিয়ে মাশুকের বসতবাড়ীর উঠানে টিনের ঘর নির্মাণ করে। একই সাথে মাশুকের মা, স্ত্রী ও পরিবারের লোকদের নির্যাতন সহ ঘর থেকে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকার সহ দামী আসবাব পত্র লুটপাট করে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মাশুকের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের সহয়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে মাশুকের পরিবার নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি আরো জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করার সময় হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে অনেকবার যোগাযোগ করেও সহায়তা না পেয়ে একপর্যায়ে ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে পুলিশ সহায়তা নেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও ততক্ষণে মাশুকের বসতঘর সহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এদিকে ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে জানান মাশুক।

মাশুকের স্ত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এ ঘটনায় তার জীবনের অর্জিত শিক্ষগত সকল গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট সহ ঘরের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখন তার পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করেছে। এছাড়েও প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্ন ভাবে জানে মেরে পেলার হুমকি দিয়ে আসছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যক্তি জানান, ছৈয়দ আহমদ পূর্বেও এলাকাবাসীর অনেক জায়গা জমি জবরদখল করেছে। তিনি মানুষকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় এলাকার মানুষ তাকে মামলাবাজ ছৈয়দ আখ্যায়িত করে মামলা ছৈয়দ নামে ডাকে।

এই বিষয়ে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ফাঁড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও একাদিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমান, উভয় পক্ষকে ডেকে অভিযোগের বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন।

এই ব্যাপারে জেলা সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ