কক্সবাজারের শুটকী পর্যটকের প্রথম পছন্দ

আব্দুল আলীম নোবেলঃ
ভোজন রসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় এক খাবার শুটকি। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে বিদেশেও বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে জনপ্রিয় খাবার শুটকি।
আর এই শুটকি  শিল্পকে ঘিরে শুটকি তৈরি ও ব্যবসার সাথে জড়িত প্রায় লক্ষধিক মানুষ জড়িত। আবার অনেক ব্যবসায়ী ব্যংক লোণ নিয়েও ব্যবসা সম্প্রসারণ করে চলছে তাদের জীবন। 
সুগন্ধা সড়স্থ সৈকত শুটকী আড়ৎ এর মালিক ব্যবসায়ি শামশুল আলম জানান, পর্যটন মৌসুমে আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। দামের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার দামে মাছ রয়েছে।  কোন ক্যামিকেল ছাড়াই শুটকি ক্রেতাদের তুলে দিতে পারলে ভালো লাগে। 
ভোজন রসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় এক খাবার শুটকি। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে বিদেশেও বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে জনপ্রিয় খাবার শুটকি।
আগে দামে সস্তা থাকায় শুটকিকে গরীবের খাবার হিসেবে তাচ্ছিল্য করা হতো। কিন্তু এখন শুটকির দামের বৃদ্ধির পাশাপাশি বদলেছে অবস্থানও। এখন শুটকি দেশের ধনীদের অন্যতম নিয়মিত একটি খাবার মেন্যু। এমনকি দেশের বিভিন্ন নামী-দামি রেস্টুরেন্ট সহ বিলাসবহুল ‍হোটেলেও শুটকির উপস্থিতি দেখা যায়।
ফলে এক সময়ের গরীরের শুটকি এখন চড়া দামের কারণে মধ্যবিত্ত ও গরীবের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। 
বাংলাদেশে উৎপাদিত শুটকির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় কক্সবাজারে। আগে কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি শুটকির গ্রাম ছিল। কিছু দরিদ্র মানুষ শুটকি তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন শুটকি উৎপাদন হয় বাণিজ্যিকভাবে, বিশাল কলেবরে। 
শুটকি বিক্রির জন্য একসময় কক্সবাজারের টেকপাড়া, রুমালিরছড়া, কানাইয়ার বাজার ও বিমানবন্দর সড়কের মুখে ফুটপাতে বেশকিছু দোকান ছিল। এখন এর পাশাপাশি বিক্রিতে এসেছে আভিজাত্য। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বার্মিজ মার্কেটের অভিজাত দোকান, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী বিচ মার্কেট, সুগান্ধা সড়ক, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যায় সুদৃশ্য শুটকির দোকান। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব দোকান থেকে শুটকি সংগ্রহ করেন। 
কক্সবাজার শহরের ভেতরে একটু দূরে নাজিরারটেক রয়েছে 
 বিশাল সমুদ্র উপকূলে যে কয়েকশত একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত এ রকম একটা শুটকিপল্লী হতে ‍পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। সেখানে দেখা যাবে আদি-অন্তের সব রহস্য। 
দেখা মিলবে নারীরা কিভাবে একের পর এক শুটকি বেছে বেছে তা রোদে শুকানোর উপযোগী করছে। পুরো এলাকার বাতাসে শুটকির ঘ্রাণ। 
কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকা মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, তাজিয়াকাটা, কুতুবজোম, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ, খুদিয়ারটেক, আলী আকবর ডেইল, অংজাখালী, পশ্চিম ধুরুং, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, জালিয়াপাড়া, সদর উপজেলার নাজিবারটেক, খুরুশকুল, সমিতিপাড়া, চৌফলদণ্ডিসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় বিপুল পরিমাণ শুটকি তৈরি হয়। 
এসব শুটকির মধ্যে সামুদ্রিক রূপচাঁদা, ছুরি লাক্কা, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, চিংড়ি এবং মিঠাপানির মাছের মধ্যে শোল, কাচকি, কুচো চিংড়ি, মলা, গইন্যা, বাইলা, ফাইস্যাসহ প্রায় ২০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি হয়।
কক্সবাজারে শুটকি শুকানোর সবচেয়ে বড় মহাল কক্সবাজার শহর সংলগ্ন পশ্চিম সাগরের তীরে নাজিরারটেক। এটি নতুন চরএলাকা। বছরজুড়ে এখানে চলে শুটকি মাছের উৎপাদন। প্রায় শত একরের বিশাল এলাকাজুড়ে শত শত বাঁশের মাচায় নানা জাতের মাছ শুকানো হয়। কিন্তু এখানে শুটকি মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে নষ্ট হয় অনেক মাছ। 
যদিও মাছি ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য নানা শুটকিতে নানা ধরনের বিষাক্ত কীটনাশক, অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়। ফলে শুঁটকির গুণগত মান নষ্ট হয়। 
উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা জানান, আগে কীটনাশক ব্যবহার করা হলেও এখন তারা মাছ ভালোভাবে শুকিয়ে পলিথিনের প্যাকেটে সংরক্ষণ করেন। ফলে শুটকির মান ভালো থাকে এবং নষ্ট হয় না।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, শুটকি রপ্তানি  করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর ৭২-৭৩ সালে শুটকি রপ্তানি থেকে যেখানে সরকারের আয় হতো ১৭ হাজার ৯০০ টাকা, সেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে শুটকি রপ্তানি ‍করে আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তবে বর্তমানে এর পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি। 
 যারা ভ্রমণপিপাসু কক্সবাজারে আসেন একটু কষ্ট হলেও ওই শুটকি পল্লী দেখে আসা উচিত। দেশের মধ্যে কি এক যজ্ঞ হচ্ছে তা ‍না দেখলে অনেক মজা ও শেখা অপূর্ণ থেকে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ