পাওয়ার ক্রাসার বন্ধে কঠোর অবস্থানে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল।


নাটোর সংবাদদাতা,
উত্তরাঞ্চলের ভারী শিল্পের মধ্যে অন্যতম নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল। প্রতিবছরই আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর আগে থেকেই অবৈধ পাওয়ার ক্রাসার দিয়ে বিপুল পরিমানে আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদনকারীরা। এতে করে প্রতিবছরই বড় ধরনের লোকসান গুনছে রাষ্ট্রয়াত্ব এই মিলটি। 

তবে এবার অবৈধ পাওয়ার ক্রাসারে আখ মাড়াই বন্ধ করতে মৌসুম শুরুর আগেই মাঠে নেমেছে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। চাষীদের সাথে মতবিনিময় সভার পাশাপাশি পাওয়ার ক্রাসার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে মিল কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন।
সূত্র জানায়, মিল জোন এলাকায় পাওয়ার ক্রাসারে আখ মাড়াই করে গুড় তৈরী ও গুড় পরিবহন বন্ধে নিষেধাক্কা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এজন্য জেলা প্রশাসক মো: শাহরিয়াজ স্বাক্ষরিত প্রচারপত্র সাধারণ মানুষদের মাঝে বিলি করা হয়েছে।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৯ জুলাই প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে চলতি বছরের ১জুলাই থেকে ২০২০সালে ৩১মে পর্যন্ত মিল জোন এলাকায় শক্তিচালিত মাড়াইকলে আখ মাড়াই নিষেধাক্কা জারি করা হয়েছে। এই নিষেধাক্কা অমান্য করে কেউ আখ মাড়াই করলে জেল জরিমানার ঘোষনা দিয়েছে প্রশাসন।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সূত্রে জানায়, মিলের নিজস্ব খামারে উৎপাদিত আখসহ এবছর মিল জোনে ২৪ হাজার একর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। চলতি ২০১৯-২০ আখ মাড়াই মৌসুমে ২ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শুরুতেই সুগার মিলটি আখ মাড়াই শুরু হবে।
এই লক্ষ্য নিয়েই মিল জোন এলাকায় যাতে অবৈধ পাওয়ার ক্রাসারের মাধ্যমে আখ মাড়াই করতে না পারে সেজন্য সময় মত চাষীদের টাকা পরিশোধ, পাওয়ার ক্রাসারে আখ মাড়াই না করতে সচেতন সহ বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, মিল জোনে অবৈধ পাওয়ার ক্রাসার চলতে দেওয়া হবে না। চাষীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য তাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন জানান, যন্ত্রচালিত আখ মাড়াই কলে আখ মাড়ায়ের ফলে চিনিকল লক্ষমাত্রা অর্জনে ব্যার্থ হয়। ফলে লোকসান গুনতে হয়। আর অবৈধ মাড়াই কলে আখ মাড়াই করে উৎপাদিত গুড় দিয়ে তৈরী করা হয় ভেজাল গুড় যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে একদিকে যেমন চিনি শিল্প ধবংসের পথে যাচ্ছে, অপর দিকে দেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে পড়ছে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল কাদের জানান, চাষীদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত আখের মূল্য সময়মত পরিশোধসহ আখচাষীদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপরে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আখচাষীদের নিয়ে সভা সমাবেশ করা হচ্ছে
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল জানান, চাষীর কাছ থেকে আখ ক্রয়ের সাথে সাথেই আখের মূল্য পরিশোধ করা হবে। আখের মূল্য বকেয়া থাকবে না। যাতে চাষীরা তাদের আখ সুগার মিলে সরবরাহ করেন।
তিনি জানান, চিনিশিল্পকে লাভ জনক করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চিনিকলে পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তি নিশ্চত হলেই কেবল সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ