পাঁচ লাখ পর্যটক সমাগম হতে পারে কক্সবাজারে, ৫০০ কোটি বাণিজ্যের আশা


ওমর ফারুক সোহাগ :করোনা দুর্যোগে মন্দা গেছে দেশের পর্যটনশিল্পে। দীর্ঘ বন্ধের পর চলতি বছরের আগস্টের শেষ সময় থেকে খুলেছে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটনস্পট। এরইমধ্যে বিজয় দিবসকে ঘিরে টানা ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। চলতি পর্যটন মৌসুমে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপ্রিয়রা কক্সবাজার আসছেন। বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিনদিনের ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এ তিনদিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে বলেও আশা করছেন তারা।

ব্যাপক উপস্থিতির কথা চিন্তা করে নিরাপত্তা বলয় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা, তথ্যসেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হোটেল মালিকদের বরাত দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান জানান, টানা ছুটিকে টার্গেট করে এক সপ্তাহ আগে থেকে আগাম বুকিং হয়ে আছে পর্যটনকেন্দ্রিক সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালনে প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটনস্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।

ঢকার মোহাম্মদপুরের চাঁদউদ্যান এলাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি ফয়সাল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। বিজয় দিবসের ছুটিসহ টানা বন্ধ পেয়ে বাড়ির সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার এসে হোটেল ওশান প্যারাডাইসে উঠেছি। আমাদের হোটেলের প্রায় রুমে লোকজন আছে বলে মনে হচ্ছে।’

তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেকার বলেন, ‘এখন পর্যটন মৌসুম। প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করেন। তবে বিজয় দিবসের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে একসঙ্গে অনেক লোক বেড়াতে আসছেন। এবারও টানা তিনদিন ছুুুটি পড়ায় সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়েছে।’

হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণক্ষমতা রয়েছে এবার তার চেয়ে বেশি লোকসমাগম হবে বলে মনে করছেন কলাতলীর মোহাম্মদীয়া গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী।

তিনি বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতা তেমনই বলছে। রুম বুকিং করে যারা এসেছেন, তারা ছাড়া বাকিরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। কারণ এখানে দেড় লাখের মতো লোক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সৈকত শহর কক্সবাজারে চার থেকে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটকের আগমন হলে রাত্রিযাপন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘ঢেউয়ের তালে পর্যটকরা দাপিয়ে বেড়ান। অনেকে বিপৎসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের কিনারায় আনতে এবং নিরাপদ থাকতে আমরা বারবার সতর্ক করি।’

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, করোনা আমাদের চরমভাবে ঋণগ্রস্ত করেছে। বিজয় দিসব উপলক্ষে পর্যটক উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ