সততা ও দক্ষতায় অধিকতর প্রশংসনীয় রংপুর বিভাগে আবারো সেরা পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার


মোঃ কামরুল ইসলাম কামু ,পঞ্চগড়ঃ
 

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী রংপুর রেঞ্জের আট জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার (এসপি) মনোনীত হয়েছেন। এ নিয়ে তিনি একাধিকবার শ্রেষ্ট পুলিশ সুপার পুরস্কারে ভূষিত হন। তার সততা আর দক্ষতায় জেলার মানুষ মুগ্ধ।

আগস্ট মাসে পঞ্চগড় জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথার্থ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখায় তাকে এই শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সোমবার ভার্চুয়ালি রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের সম্মেলন কক্ষ থেকে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় ডিআইজি অফিসের কর্মকর্তা ও রংপুর বিভাগের আট জেলার পুলিশ সুপাররা সংযুক্ত ছিলেন।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্যের নির্দেশনায় পঞ্চগড় পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে বদলে গেছে পঞ্চগড়ের সকল থানায় পুলিশের সেবার ধারণ। তিনি ২০১৯ সালের ৮ জুলাই পঞ্চগড়ে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেয়ার পরই থানাগুলোর চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। বদলে যায় পুলিশের আচরণ। বন্ধ করে দীর্ঘদিনের পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। অতীতে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামেও যা বন্ধ করা যায়নি। 

এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) পুলিশি সেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, থানার প্রধান ফটকগুলোতে ইতিপূর্বে জিডি, অভিযোগ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট ভিআর, চাকরির ভিআরসহ যে কোন পুলিশি সেবা গ্রহণ করতে টাকা লাগেনা এমন লেখা সম্বলিত ব্যানার, পেস্টুন ঝুলিয়ে দেন। যার ফলে থানায় দালাল ও ঘুষের দৌরাত্ম নেই। স্থানীয়রা বলেন, এই এসপি যোগদানের পর থেকে কোন টাকা পয়সা লেনদেন ছাড়াই মানুষ নিরন্তর সেবা পাচ্ছেন জেলাবাসী। এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস নির্মুলসহ নানা কাজে পুলিশ ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

ওসিদের এমন পদক্ষেপে আইনগত সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ উৎফুল্ল। পুলিশের সেবা নিতে আসা অনেকে তাঁর এমন কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। অনেকে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এসব কাজের কথা তুলে ধরছেন। তিনি প্রতিদিন ডিউটিরত অফিসার ও প্রহরীর কাছে খোঁজ নেন কোন মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। এর ফলে থানায় কর্মরত সব পুলিশের মধ্যে সাধারণ মানুষের প্রতি ভাল ব্যবহার করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। অফিস থেকে সিসি ক্যামেরায় থানাগুলোর কার্যক্রম তদারক করছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। সিসি ক্যামেরার কল্যাণে বেশকিছু অপরাধী ধরা পড়েছে। ফলে অপরাধও কমে এসেছে। থানাগুলোতে সেবা নিতে আসা একাধিক জনসাধারণ জানান, জেলার থানাগুলোতে অভিযোগ নিয়ে গেলে ডিউটি অফিসাররা মনোযোগ সহকারে ভুক্তভোগীদের কথা শুনে অভিযোগ লিখে নেন। কোন ধরনের টাকা ছাড়াই অফিসাররা তা গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। কোথাও পোস্টিং নিতে এখন আর কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। পরিদর্শকদের বিভিন্ন মানদন্ড বিচার করে নম্বর প্রদান করা হয়। এই নম্বরের ভিত্তিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। কেউ চাইলে পছন্দের জায়গায় যেতে পারছেন না।শুধ কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা নিয়ন্ত্রণ? পুলিশ সুপারের নেতৃত্বেই পঞ্চগড়ের পুলিশ মানবিক পুলিশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। 

করোনায় অসহায় মানুুষের বাড়িতে বাড়িতে রাতের আঁধারে গোপনে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। রেলস্টেশন ও মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা মানুষকে তুলে এনে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আটোয়ারীতে বাজারে পড়ে থাকা এক অসহায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে পর্নবাসনের ব্যবস্থা করেন।  করোনায় পরিবহণ বন্ধ। পঞ্চগড়ের চাষীরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়ে। তিনি অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের পঞ্চগড়ে এনে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশের অন্য জেলায় সবজি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ক্লুলেস একাধিক হত্যা মামলার আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেছেন। অসুস্থ্য কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকেও আর্থিক সহায়তা করেছেন। রমজানে ও করোনায় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বাড়িতে বাড়িতে উপহার পাঠিয়েছেন।

সদর উপজেলার ভূসিভিটা গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যান চালক এনামূল হক জানান,‘সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের সোনারবান গ্রামের স্বামী,স্ত্রী ও মেয়ে চক্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অপহরনের পর মারধর, মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে মুক্তিপন আদায়, জোরপূর্বক ধরে এনে মানহানি, বিব্রতকর ছবি তুলে অর্থ আদায়, মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কার্যকলাপ, প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক অর্থ আদায়, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করে আসছিল এলাকার মানুষ। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু করতে পারছিল না।  গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং মারপিট করে। তারা ৫০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায়। অসহায় ভ্যান চালক ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলে তাকে বাড়িতে ফোন করে টাকা আনার সুযোগ দেয় ওই অপহরনকারী প্রতারক চক্রটি। এ বিষয়টি আমার পরিবারের লোকেরা পঞ্চগড় সদর থানায় জানালে গত ১৯ সেপ্টম্বর ভোর রাতে অমরখানা বোর্ড বাজার এলাকা থেকে মুক্তিপনের টাকাসহ পুলিশ মা মেয়েকে গ্রেপ্তার করে এবং আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পঞ্চগড় থানার পুলিশ খুব ভালো কাজ করেছে। এলাকার মানুষ খুবই খশী।’

সদর থানার ওসি মো. আব্দুল লতিফ মিঞা জানান, “পুশিল জনগণের বন্ধু, পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ” এই স্লোগানে এসপি ও ডিআইজি স্যারের উদ্বুদ্ধকরণ, মটিভেশন ও নির্দেশনা দিয়ে পুলিশকে জনমুখী করার কাজ চলমান  রেখেছেন। থানায় এসে মানুষ যাতে সর্বোচ্চ সেবা পায় সে চেষ্টায় করে যাচ্ছি। আগামীতে যেন সেবার মান আরো বৃদ্ধি করতে পারি তার জন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি। 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আইজি ও ডিআইজি স্যারের নির্দেশনায় পঞ্চগড়ের পুলিশকে জনবান্ধব, হয়রানিমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। মানুষের প্রথম ভরসার স্থল হবে থানা। পুলিশের সেবা নিন। সেবা দিতে কেউ হয়রানি, দুর্নীতি বা অনিয়ম করলে জিরো টলারেন্স। অভিযোগ পেলে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিআইজি অফিস থেকে মূল্যায়ন করে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ