যতই আসুক মহামারি স্বাগত নববর্ষ

রাজিবুল করিম রোমিও, পাবনা :
আজ পহেলা বৈশাখ। নতুন সূর্য নিয়ে এসেছে নতুন বছর। আজকের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হল বাংলা নতুন সাল ১৪২৭। অন্যান্য বছর দিনটিতে আনন্দ উৎযাপন করার জন্য বাঙালি মুখিয়ে থাকলেও এবার ঘর থেকে বেরোতো পারছেন না কেউ। করোনার মতো মহামারির কারণে আমাদের জীবন অবরুদ্ধ। ঘরে বসে দেশের মানুষ মোকাবেলা করছে এই মহামারীর। সেজন্য অন্যান্য পহেলা বৈশাখে বাঙালির মধ্যে যে প্রাণের ছোঁয়া লাগতো এবার তেমনটা হচ্ছে না। এবার বাংলা ঢোলের বাজনা বাজবে বাঙালির মনে মনে। রাস্তা বা খোলা ময়দানে প্রাণে প্রাণ মিলবে না। উষার আলোয় আজ জেগে উঠবে সারা দেশ। মঙ্গলের প্রত্যাশায়, সব মানুষের কল্যাণ কামনায় বেরোবে না মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহর-নগর-গ্রামগঞ্জে বসবে না বৈশাখী মেলা। প্রভাতের প্রথম কিরণে কোটি বাঙালির কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হবে না সেই উজ্জীবনী আবাহন, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।তারপরও বছরের প্রথম দিনে প্রার্থনা করি, জীর্ণ-পুরনোকে দূরে সরিয়ে আনন্দের ডালি নিয়ে আসুক নতুন বছর। যে ঘোর আতঙ্ক আমাদের গ্রাস করেছে, তা কেটে যাক। এবারের বৈশাখের তাপসনিশ্বাসবায়ে বছরের আবর্জনা শুধু নয়, দূর হয়ে যাক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি। পহেলা বৈশাখ তথা ডিজিটালি বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সীমিত আকারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’- প্রতিপাদ্যে সীমিত আকারে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে। উপলক্ষে দুই দিন আগে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেয়া হয়। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নবসজ্জার অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে আজ পহেলা বৈশাখ ভোর ৭টা থেকে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছ থেকে সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুষ্ঠানের ফ্রেশ ফিড পাবে। এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে, যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আরেকটি ধারণকৃত অনুষ্ঠান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত একটি বক্তব্য ছাড়াও বৈশাখের গান, নৃত্য, আবৃত্তি আয়োজন থাকবে। ফেসবুকে ডিজিটালি বর্ষবরণের আয়োজন করেছে উদীচী। অন্যদিকে জনসমাগম না করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরআপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়প্রতিপাদ্য করে এবারে বর্ষবরণের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবারের পহেলা বৈশাখের রংটাই পাল্টে দিয়েছে। ভাইরাসটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করেছে। জনসমাগম এড়িয়ে চলাই এই ভাইরাস প্রতিরোধের সর্বোত্তম পন্থা। তাই সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। ছুটি বলবৎ থাকবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ছুটি বলা হলেও কার্যত লকডাউন অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে দেশ। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এমনিতেও অনেক জেলা, শহর, এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে মানুষের চলাচল। একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সে কারণে অন্যান্য সময় পহেলা বৈশাখের আগে যে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে তা এবার অনুপস্থিত। দোকানপাট বন্ধ বলে পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য হালখাতার আয়োজন নেই, নেই বৈশাখী কেনাকাটা। নেই পান্তা-ইলিশ আয়োজনের তোড়জোড়। এই মহাদুর্যোগের মধ্যেই বৈশাখ আসায় সরকারি আদেশেই এদিন খোলামাঠে সকল আয়োজন বন্ধ। পহেলা বৈশাখের অন্যতম আয়োজন রমনা বটমূলে প্রভাতী আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, শিশু পার্কের সামনে ঋষিজের অনুষ্ঠানসহ সব বন্ধ করা হয়েছে। বাঙালি আজ ঘরে বসেই তার সাধ্যমতো খাবার আয়োজন করবে। পড়বে নতুন পোশাক। মোবাইল মেসেজ বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নেবে। ঘরে বসে থাকলেও তাদের মনে সত্যি সত্যি খেলে যাবে বৈশাখের রং। আজকের অন্যরকম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন রেডিও চ্যানেলগুলো উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। আজকের এই বিশেষ দিনে সবার একটাই চাওয়া, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।বিশ্ব করোনাভাইরাসমুক্ত হোক। জীবনকে খুঁজে পাক নতুন আনন্দে।যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,/মুক্ত করো হে বন্ধ’-নতুন বছরে এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা। শুভ নববর্ষ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ