সৈয়দপুরে মন্ডপে মন্ডপে চলছে দুর্গোৎসবের আয়োজন


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

শিউলী-কাশের আগমনী বার্তায় দরজায় কড়া নাড়ছে শারদ উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রস্তুতি চলছে সৈয়দপুরজুড়ে। উপজেলার মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরী ব্যস্ততা। মৃৎশিল্পীরা নিপুন হাতে তৈরী করছেন প্রতিমা। কোন কোন মন্ডপে রঙের প্রলেপ দেয়া শুরু হয়ে গেছে। আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এজন্য প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা। সেই সঙ্গে উৎসব পালনে সনাতন পরিবারে উৎসবের আমেজে বিরাজ করছে। পূজা উপলক্ষে শহরের কাপড়, প্রসাধনী ও পাদুকা দোকানে জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা।

দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করছেন সনাতন ধর্মের মানুষ। পূজায় বেশী ভীড় দেখা যাচ্ছে শাড়ী ও তৈরী পোশাকের দোকানগুলোতে। সবাই হাল ফ্যাসনের শাড়ী, থ্রিপিস ও বাচ্চাদের পোষাক কিনতে ব্যস্ত। এছাড়াও ভীড় দেখা যাচ্ছে প্রসাধনী ও পাদুকা দোকানেও। পূজায় এ বছর ভালোই বেচাবিক্রি হচ্ছে বলে জানান মার্কেটের দোকানীরা।

সৈয়দপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক রাজ কুমার পোদ্দার জানান, এবার সৈয়দপুর উপজেলায় পাঁচ ইউনিয়ন ও শহরের পাড়া-মহল্লা মিলিয়ে ৮২ মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এখন মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরীর শেষ পর্যায়ের কাজ। অনেক মন্ডপে রঙের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর মহাদশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে করে। আর ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনসহ পূজা মন্ডপ কমিটিগুলো তৎপর রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বরং সবার সহযোগিতায় উৎসব পালনের প্রস্তুতি চলছে।

সরেজমিনে শহর ও গ্রামের মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় সব মন্ডপে শোভা পাচ্ছে প্রতিমা। চলছে কাদা-মাটির শেষ প্রলেপের কাজ। কোন কোন মন্ডপে রঙের কাজও করতে দেখা যায় মৃৎশিল্পীদের। শহরের অদূরে মিস্ত্রীপাড়া বাইপাস সড়কে শিবঠাকুর মন্দিরে কথা হয় মৃৎশিল্পী ধীরেন্দ্রনাথ মহন্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মন্দিরে একমাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। তার সঙ্গে আরও ৪ জন কারিগর দিন-রাত শ্রম দিচ্ছেন। মাটি লেপনের কাজ শেষ হলে শুরু হবে রংতুলির কাজ। এ মন্ডপে তিনি ৫০ হাজার টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। একটি বড় প্রতিমা তৈরী করতে ৮০/৯০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। তিনি বলেন এখন প্রতিমা তৈরীর উপকরণের দাম অনেক বেশী। সীমিত লাভে কাজ করি। অর্থ নয়, ভগবানের সন্তুষ্টি লাভই আমার উদ্দেশ্য।

এ মন্দিরের সভাপতি নির্মল চন্দ্র রায় নিতু জানান, এবার বড় আকারে মন্ডপ করা হচ্ছে। উৎসবকে আকর্ষণীয় করতে মন্ডপ চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। অষ্টমীর দিন থাকবে যাদু প্রদর্শনীর আয়োজন। পূজার সঙ্গে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিতে এসব আয়োজন রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধিসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে মন্ডপে।

এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু হাসনাত সরকার জানান, সৈয়দপুর উপজেলা ৮৪টি পূজা মন্ডপের জন্য ৪১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ মিলেছে। প্রতিটি মন্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে পূজা মন্ডপ কমিটির অনুকূলে চালের ডিও দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান জানান, এক মাস আগে থেকেই উপজেলা সব মন্ডপ ও মন্দির পুলিশী নজরদারির মধ্যে রয়েছে। পূজা শুরু হলে মন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সশরীরে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া নিয়োজিত থাকবে পুলিশের একাধিক টহল দল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ