নাটোরে বিদায়ী বছরে ৪০ খুন!

নাজমুল হাসান,বিশেষ প্রতিবেদক
আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসন, ছিনতাই, পারিবারিক বিরোধ সহ নানা কারণে নাটোরে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে জেলায় ৪০টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এতে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসি। ন্যায় বিচারের দীর্ঘসুত্রতা পরিহার করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ নৈতিক মূল্যবোধ, সহনশীলতার চর্চার মাধ্যমে হত্যাকান্ডের মতো অপরাধমূলক প্রবনতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরেজমিনে নাটোর শহরতলীর দত্তপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এক সন্তান হারানো মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ। গত ১৪ ফেব্রয়ারি দত্তপাড়া বাজারে কুপিয়ে হত্যা করা হয় হাসান আলীকে। ঘটনার দশ মাস অতিবাহিত হলেও মুল খুনিরা থেকে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিহত হাসানের মা হাজেরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, প্রায় বছর হতে চলল। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার পাইনি। আমার সন্তানকে প্রকাশ্যে যারা কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। হত্যাকান্ডে জড়িতরা আইনের আওতায় না আসায় হতাশ প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় জর্জরিত হাসানের স্বজনরাও। সার্বিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নাটোরের সাত উপজেলায় প্রায় প্রতি মাসেই নানা কারণে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। আর বেশীরভাগ হত্যাকান্ডগুলো সংগঠিত হয় প্রকাশ্যেই। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, বছর জেলায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪০টি। যার মধ্যে সদর থানায় ছয়টি, সিংড়া থানায় নয়টি, নলডাঙ্গা থানায় তিনটি, বড়াইগ্রামে আটটি, বাগাতিপাড়ায় একটি, লালপুরে ছয়টি আর গুরুদাসপুর থানায় সাতটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, মাদকের আগ্রাসনসহ পারিবারিক বিরোধে প্রাণ হারাচ্ছে নারী, শিশুসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিচারহীনতার দীর্ঘসুত্রতা পরিহার করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ নৈতিক মূল্যবোধ, সহনশীলতার চর্চার মাধ্যমে হত্যাকান্ডের মতো অপরাধমূলক প্রবনতা কমিয়ে আনা সম্ভব। নাটোর জজকোটের আইনজীবী এ্যাড. ভাস্কর বাগচী বলেন, আমরা এবার জানতে পেরেছি নাটোর এবার প্রায় ৪০টি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকান্ডের পেছনে দেখা যাবে, এর পেছনে আছে ভুমিবিরোধ, মাদক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং সামাজিক অস্থিরতাসহ নারী নির্যাতন। এইগুলো যদি সমাজ থেকে দ্রুত নিস্পতি করা যায় পাশাপাশি এই মামলার বিচারগুলো যদি দ্রুত নিস্পত্তি করা যায় তাহলে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। সেই সাথে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা কমে আসবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ভাস্কর্য বিভাগ- চারুকলা অনুষদের সহযোগি অধ্যাপক, . একেএম আরিফুল ইসলাম আরিফ জানান, হত্যাকান্ড রোধ করা আইনশৃঙ্খরাবাহিনির একক দায়িত্ব নয়। এটা রোধে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা জাগ্রত করতে হবে। মানুষত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। সেই সাথে আমাদের সহনশীল হতে হবে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সহনশীল হবার জন্য উপদেশ দিতে হবে। তাদেরকে প্রকৃত মানুষত্ববোধ বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেশটা সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে উঠবে। পাবনা মানসিক হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সাইকিয়াট্রি) ডাঃ মাসুদ রানা সরকার বলেন, যে কোন হত্যাকান্ডের পেছনে শুধু যে মানষিক প্রবলেম আছে তা বলা মুশকিল। এখানে আইনের শাসনের অভাব থাকতে পারে। নৈতিক মুল্যবোধ অভাব, পারিবারিক অশান্তি, মাদকের আগ্রাসনের নানা কারণে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে থাকে। থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ইমাম, ফাদার, পুরোহিতসহ সকল ধর্মীয় লোকজনকে নৈতিক মুল্যবোধ সৃষ্টি জন্য কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খুনের মামলাগুলোর অগ্রগতি ভাল উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, ২০১৯ সালে নাটোর জেলায় সংগঠিত ৪০টি হত্যাকান্ডের মধ্যে অধিকাংশ হত্যারহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। যে হত্যা মামলাগুলো রহস্য উদঘাটিত হয়নি সে মামলাগুলো নিয়ে আমরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। হত্যাকান্ডে যাতে না হতে পারে সে জন্য আমরা কাউন্সিলিং করছি এবং সাতটি থানায় ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা কমিউনিটি পুলিশিং সহ আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এভাবে কাজ করার ফলে আমরা হত্যাকান্ড কমাতে পারবো। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতার কারণে নাটোরে ক্রমান্নয়ে হত্যার ঘটনা কমে যাচ্ছে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ